Home সারাদেশ  মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

 মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

প্রতিবাদে উত্তাল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পরীক্ষায় পাশ ও বেশি নম্বর দেওয়ার আশ্বাসে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সোমবার দুপুরে উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের খান্দুরা ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সামনে নাসিরনগর-হবিগঞ্জ সড়কে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযোগ ওঠা মাদ্রাসা সুপারের নাম মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি খান্দুরা ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, দাখিলের (এসএসসি সমমান) নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে মাদ্রাসা সুপার জহিরুল ছাত্রীদের ফাঁদে ফেলতেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করা হতো। যেসব ছাত্রী তার ফাঁদ এড়িয়ে যেতে পারতেন, তাদের পরীক্ষায় ফেল করানো হতো। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে এলাকার কয়েকজন প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার জানায়, “নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করানো ও বেশি নম্বর দেওয়ার কথা বলে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিতেন হুজুর (মাদ্রাসা সুপার)।” একই শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিবা আক্তার বলেন, “নির্বাচনী পরীক্ষা না দিয়েই আমাদের কয়েকজনকে দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন হুজুর। বিনিময়ে হুজুরের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেতে প্রস্তাব দেওয়া হতো।” নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার জানায়, “হুজুর যা করেছে, সেটা বলার মতো ভাষা আমাদের নেই। আমরা এখন খুবই আতঙ্কিত।”

মাদ্রাসার বাংলা বিষয়ের শিক্ষক নিলুফা আক্তার বলেন, “বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে হুজুরের খারাপ প্রস্তাবের বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। এসব বিষয়ে কথা বলায় কয়েকজন শিক্ষকের মূল সার্টিফিকেট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।” অপর শিক্ষক মো. মহিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মাদ্রাসা সুপারের অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় তাকে একাধিকবার মারধর করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, এলাকার প্রবাসীদের স্ত্রীদের সঙ্গে হুজুরের অনৈতিক সম্পর্কের একাধিক ভিডিও স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়েছে। মানববন্ধনে কয়েকজন শিক্ষক আরও অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার ভর্তি পরীক্ষা, বেতন, রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলআপ, প্রবেশপত্রসহ বিভিন্ন খাতে ৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে অনিয়মের সব টাকা ফেরত ও সার্টিফিকেট নিজ দায়িত্বে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন মাদ্রাসা সুপার।

ইউপি সদস্য ও পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, “মাদ্রাসা সুপার নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না। উপজেলায় কাজ আছে বলে তিনি হবিগঞ্জে নিজ বাসায় থাকেন, পরে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।” তিনি জানান, সুপারের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও অভিযোগ তদন্তের দাবি করেছেন।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ সোহেল আবদাল বলেন, “মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে কয়েকজন ভুক্তভোগীর লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন ভট্টাচার্য বলেন, “মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাসরিন বলেন, “খান্দুরা ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে তারাই অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।”