বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
ক্লিভেজ বা বক্ষ বিভাজন একটি শব্দ যা বহু সময় ধরেই শুধুমাত্র যৌনতার চশমায় দেখা হয়েছে। কিন্তু এর ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে উঠে আসে একটি ভিন্ন চিত্র, যেখানে নারী শরীর শুধু কামনার বস্তু নয়, বরং রাজনৈতিক অবস্থান, সামাজিক প্রথা ও স্বাধীনচেতা নারীত্বের এক প্রবল প্রতীক। ফরাসি রাজসভা থেকে শুরু করে নারীবাদী আন্দোলন পর্যন্ত বক্ষ বিভাজন লিখেছে এক অনন্য ইতিহাস।
রাজকীয় ঐশ্বর্য থেকে লজ্জার পর্দা
সতেরো শতকের ফ্রান্সে ক্লিভেজ ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। রাজপ্রাসাদে মহিলারা গর্বভরে প্রদর্শন করতেন সুসজ্জিত স্তনবিভাজন। এটিই ছিল তাদের সামাজিক অবস্থান ও সৌন্দর্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। লুই চতুর্দশের সময়ে এমন পোশাকই ছিল রাজানুষ্ঠানের মূল অলংকার। কিন্তু ঔপনিবেশিক যুগ এবং ভিক্টোরিয়ান শাসনের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা সমাজে শরীরের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সংযমের মোড়ক। বক্ষ ঢাকা পড়ে যায় মোটা কাপড়ে।
ফ্যাশন যখন নারীর প্রতিবাদ
পঞ্চাশের দশকে ‘সুইটার গার্ল’ স্টাইল এবং ‘বুলেট ব্রা’ নারীত্বকে আবার দৃশ্যমান করে তোলে। তখনকার হলিউড তারকারা এই ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করে তোলেন, যা একদিকে যৌন আবেদন জাগিয়ে তুললেও, অন্যদিকে নারী দেহের স্বতন্ত্রতাকে তুলে ধরেছিল সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে।
ষাটের দশকে আসে নারী স্বাধীনতার ঢেউ। ‘ব্রা-হীন বিপ্লব’ বা ‘বার্ন দ্য ব্রা’ আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরা জানিয়ে দিলেন তারা আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া সৌন্দর্য মানদণ্ডে চলবেন না। ব্রা ছাড়াই তারা রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিবাদ করেছেন পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। স্তন হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক বার্তার বাহক।
আধুনিক যুগে ক্লিভেজ: যৌনতা নয়, অধিকার
আজকের ফ্যাশনে ক্লিভেজ আর শুধু গ্ল্যামারের বিষয় নয়। অনেক নারীর কাছে এটি আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের মতো করে ক্লিভেজ প্রদর্শন নারীরা গ্রহণ করছেন নিজের শরীরের প্রতি ভালোবাসা, গর্ব ও অধিকার জানানোর ভাষা হিসেবে। একই সঙ্গে চলেছে ‘ফ্রি দ্য নিপল’ আন্দোলন, যা স্তনের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের দাবি তোলে।
ক্লিভেজ এখন শুধুই দেহপ্রদর্শন নয়, এটি এক রাজনৈতিক অবস্থান নারীর স্বাধীনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক রীতির প্রতিক্রিয়ার প্রতীক। প্রত্যেক যুগেই বক্ষ বিভাজনের গল্প ছিল নারীর কণ্ঠস্বর, যা কখনও প্রকাশিত হয়েছে পোশাকে, কখনও আন্দোলনে, কখনও নিঃশব্দ প্রতিবাদে।
এই প্রতিবেদন শেয়ার করুন—জানুক সবাই যে স্তন কখনও ছিল না শুধু যৌনতার প্রতীক, বরং ছিল এক একটি যুগের আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি
লাইক দিয়ে মতামত জানান—আপনার চোখে কী ক্লিভেজ নারীর স্বাধীনতার ভাষা?