বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। ক্রেতারা এগুলো বেছে নিচ্ছেন মূলত দাম তুলনামূলক কম, ব্র্যান্ড নির্ভরযোগ্য এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী বলে। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে কিছু গুরুতর প্রশ্ন রয়ে গেছে—রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কতটা পরিবেশবান্ধব, আর সড়ক নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
বিশ্বের অনেক দেশেই পুরনো গাড়ি ধীরে ধীরে ব্যবহার থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং জ্বালানি পোড়ানোর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে কার্বন নিঃসরণও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে যে গাড়িগুলো আমদানি হয়, তার বেশিরভাগই পাঁচ থেকে আট বছর আগে জাপানে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন অনেক সময় আধুনিক নির্গমন নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি (emission control technology) অনুসারে আপডেট করা থাকে না। এর ফলে শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণ বাড়াতে এগুলোর ভূমিকা ক্রমেই আলোচনায় আসছে।
পরিবেশবিদদের মতে, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হলো পুরনো গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনার সময় অনেক ক্রেতাই ইঞ্জিনের অবস্থা যাচাই না করে কেবল বাহ্যিক দিক দেখে সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে গাড়ি রাস্তায় নামলে দেখা দেয় ধোঁয়া, শব্দ ও জ্বালানি খরচের সমস্যা। এর ফলে শুধু পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অন্যদিকে, নিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রিকন্ডিশন্ড গাড়ি পূর্বে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, যা আমদানির আগে পূর্ণাঙ্গভাবে মেরামত করা হয়নি। ফলে ব্রেক সিস্টেম, এয়ারব্যাগ বা সাসপেনশন সঠিকভাবে কাজ করে না। এসব গাড়ি সড়কে চলাচলের সময় যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশে যানবাহন নিরাপত্তা পরীক্ষা (Vehicle Fitness Test) থাকলেও তা এখনো পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত মানদণ্ডে পৌঁছায়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবহারের আগে একটি বাধ্যতামূলক নিরপেক্ষ প্রযুক্তিগত পরীক্ষা থাকা দরকার। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও যদি গাড়ির ‘ইমিশন সার্টিফিকেট’ ও ‘ফিটনেস রিপোর্ট’ ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে অনিরাপদ ও দূষণকারী গাড়ি রাস্তায় নামানো অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক (EV) ও হাইব্রিড গাড়ির প্রসার ঘটানো এখন সময়ের দাবি। এগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, নিঃসরণ কমায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও তুলনামূলক কম। সরকার যদি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির পাশাপাশি এই নতুন প্রযুক্তিনির্ভর যানবাহনে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও নিরাপত্তা—দুটিই রক্ষা করা সম্ভব।
বাংলাদেশের দ্রুত নগরায়ণ ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রশ্ন উঠছে—আমরা কেমন গাড়ি চাই? শুধুই সাশ্রয়ী নয়, বরং এমন গাড়ি, যা পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে সেই সচেতনতা তৈরি করাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।









