Home আকাশ পথ নিউইয়র্কে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পদ রুজভেল্ট হোটেল বেচে দেয়া হচ্ছে

নিউইয়র্কে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পদ রুজভেল্ট হোটেল বেচে দেয়া হচ্ছে

রুজভেল্ট হোটেল, নিউইয়র্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউইয়র্ক শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক রুজভেল্ট হোটেল অবশেষে বিক্রি কিংবা দীর্ঘমেয়াদি ইজারার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে পাকিস্তান সরকার। বেসরকারিকরণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ লেনদেন কাঠামো অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভার বেসরকারিকরণ সংক্রান্ত কমিটি।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে, চলতি অর্থবছরেই পাকিস্তান রুজভেল্ট হোটেল থেকে অন্তত ১০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের প্রত্যাশা করছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও আইএমএফ শর্তপূরণের প্রেক্ষাপটে এই অর্থ প্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যেভাবে পাকিস্তানের মালিকানায় রুজভেল্ট হোটেল

রুজভেল্ট হোটেল নির্মিত হয় ১৯২৪ সালে, ম্যানহাটনের ম্যাডিসন অ্যাভিনিউতে। নামকরণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের নামে। এটি নিউইয়র্ক শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক হোটেল হিসেবে পরিচিত।

১৯৭৯ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) হোটেলটি লিজ নেয় এবং পরবর্তীতে ২০০৫ সালে সম্পূর্ণ মালিকানা পায়। পিআইএর হোল্ডিং কোম্পানি “পিআইএ ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড” হোটেলটি পরিচালনা করে আসছিল। অর্থাৎ, রুজভেল্ট হোটেল মূলত পাকিস্তান সরকারের বৈদেশিক সম্পদের অংশ হিসেবে বিবেচিত।

অর্থনৈতিক চাপে বন্ধ

কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এটি আর সাধারণ অতিথিদের জন্য খোলা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এটি লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছিল না, বরং পাকিস্তান সরকারের ওপর আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাইগ্রান্ট সংকট মোকাবেলায় নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তির আওতায় হোটেলটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে কিছু অর্থনৈতিক স্বস্তি পেলেও, সরকারের দৃষ্টিতে এটি একটি অপ্রয়োজনীয় বোঝা হিসেবেই থেকে যায়।

বিক্রি না ইজারা, দুই পথই খোলা

পাকিস্তানের বেসরকারিকরণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুজভেল্ট হোটেল নিয়ে এখন দুটি পথ খোলা—পুরোপুরি বিক্রি অথবা দীর্ঘমেয়াদি ইজারা। সিদ্ধান্ত নেবে চূড়ান্ত দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে। মূল উদ্দেশ্য, এই সম্পদ থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করা।

সমালোচনা ও বিতর্ক

হোটেলটি পাকিস্তানের জাতীয় মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এটি বিক্রি বা ইজারার সিদ্ধান্ত ঘিরে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা চলছে। কেউ একে অর্থনৈতিক বাস্তবতার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন, কেউবা বলছেন—পাকিস্তানের ঐতিহাসিক দখল হারানোর আরেক অধ্যায়।