আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের জলসীমার সন্নিকটে রোহিঙ্গা অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মালয়েশীয় জলসীমা থেকে ২২টি এবং থাইল্যান্ডের জলসীমা থেকে ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই দুর্ঘটনায় ১৪ জন জীবিত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হলেও, প্রায় ৭০ জনেরও বেশি আরোহী বহনকারী নৌকাটির বহু যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
রুক্ষ বর্ষা মৌসুমি পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডের তারুতাও উপকূলের কাছে মালয়েশিয়ার সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ৪ থেকে ৫ নটিক্যাল মাইল দূরে নৌকাটি ডুবে যায়।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল গতকাল জানিয়েছেন, উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য জীবন বাঁচানো। এই পর্যায়ে আইনি ও তদন্তমূলক বিষয়গুলি দ্বিতীয় অগ্রাধিকার পাবে। আপাতত অভিযান চলবে।”
মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (MMEA), রয়্যাল মালয়েশিয়ান নেভি এবং মেরিন পুলিশসহ একাধিক সংস্থা আকাশ, সমুদ্র এবং উপকূল বরাবর মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যৌথ নিবিড় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযানে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে ১৭৭ জন কর্মী জড়িত আছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেন যে উদ্ধারকৃত সমস্ত মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য লঙ্কাউইয়ের সুলতানাহ মালিহা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেন, “সুবিধা সীমিত এবং মরদেহের সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে চলছে।” জীবিতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে এবং তারা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পুলিশ তদন্ত করে দেখবে যে অভিবাসীরা কোথা থেকে এসেছিলেন, কীভাবে ও কখন পৌঁছালেন, কতজন আরোহী ছিলেন এবং এই ঘটনায় কোনো সিন্ডিকেট জড়িত ছিল কি না। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, এই জাহাজটি সম্ভবত একটি ‘মাদারশিপ’ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং মালয়েশীয় জলসীমার কাছাকাছি আসার সময় যাত্রীদের ছোট নৌকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল।
থাইল্যান্ডের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে লঙ্কাউই দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ অভিবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবতরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, “২০২৩ সালে মাত্র ১১টি অবতরণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরেই এই সর্বশেষ ঘটনাটিসহ আমরা ২১৭টি কেস রেকর্ড করেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, MMEA-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত লঙ্কাউইয়ের জলসীমা থেকে প্রায় ২,৩০০ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, “লঙ্কাউইয়ের জলসীমা কৌশলগত এবং সংবেদনশীল অঞ্চল। এটি থাইল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে মাত্র চার থেকে পাঁচ নটিক্যাল মাইল দূরে। এই নৈকট্য এটিকে অবৈধ পারাপারের হটস্পট করে তোলে।”
সাইফুদ্দিন নাসুশন জানান, সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে, বিশেষ করে পুলিশ এবং MMEA-কে সমুদ্রসীমায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সক্ষমতা জোরদার করতে MMEA-কে অতিরিক্ত সম্পদ যেমন হেলিকপ্টার, জাহাজ এবং রাডার সিস্টেম দিয়ে শক্তিশালী করা হবে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে—আগামী বছর ইতালি থেকে চারটি নতুন হেলিকপ্টার আসা, একটি নতুন জাহাজের নির্মাণকাজ চলমান থাকা এবং আরও দুটি অফশোর টহল জাহাজের চূড়ান্ত সংগ্রহ প্রক্রিয়া।
তিনি উল্লেখ করেন যে আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও পাচারের বিষয়টি আসিয়ান ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম মিনিস্ট্রিয়াল মিটিংয়ের অধীনে মোকাবিলা করা হচ্ছে। এই ধরনের অপরাধ দমনে জন-মানুষের পর্যায়ে, সরকার-থেকে-সরকারের পর্যায়ে এবং যৌথ অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বৃদ্ধির বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে।










