হেলথ ডেস্ক: গরমের দিনে এক গ্লাস পিমসে মোটা টুকরো শসা, টক দইয়ের টজাটজিকি বা গ্রিক সালাদে ছোট কিউব করা শসা, সব জায়গাতেই এটি অপরিহার্য। শসা শুধু সতেজ ও সুস্বাদুই নয়, বরং দামে সাশ্রয়ী এবং স্বাস্থ্যকরও।
পুষ্টিবিদ ও লেখক ড. সারা ব্রুয়ার জানান, শসা এমন এক সবজি যা প্রতিটি ফ্রিজে থাকা উচিত, কারণ এতে আছে ত্বক, হৃদযন্ত্র ও শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
শসা কি শরীরকে আর্দ্র রাখে?
হ্যাঁ। শসার সবচেয়ে বড় গুণ হলো এর উচ্চ জলীয় উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম শসায় (প্রায় ৬ সেমি টুকরো) থাকে ৯৬ গ্রাম পানি। এর ফলে এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে ক্যালরি কমায়। ৬ সেমি পরিমাণ শসায় থাকে মাত্র ১০ ক্যালরি ও ১.২ গ্রাম চিনি—যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
শসায় কী কী ভিটামিন ও খনিজ আছে?
ড. ব্রুয়ার জানান, “শসায় রয়েছে পটাশিয়াম, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও তরল বের করে দিতে সহায়তা করে। এছাড়া এতে আছে—
ম্যাগনেশিয়াম: পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং ক্লান্তি প্রতিরোধ করে
ভিটামিন সি: সুস্থ ত্বক ও মাড়ির জন্য অপরিহার্য
ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে এবং ত্বকে প্রয়োগ করলে দাগ বা ফোলাভাব কমায়।”
শসার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান
শসায় রয়েছে বেশ কিছু শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন: ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন ও লিগন্যানস।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল নামক ক্ষতিকর অণুগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে, যা ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে ও নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ড. ব্রুয়ার বলেন, “লিগন্যানস হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, আর বিটা-ক্যারোটিন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।”
শসা কি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে?
শসায় আছে ‘কুকুরবিটাসিন বি’ নামের এক যৌগ, যা প্রদাহ, স্নায়ুর ক্ষয়জনিত রোগ, টাইপ–২ ডায়াবেটিস ও কিছু ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব উপকার পেতে শসার নির্যাস বা ঘন যৌগ আলাদা করে ব্যবহারের গবেষণাই হয়েছে—তাই কয়েক টুকরো শসা খেলে নাটকীয় প্রভাব দেখা যায় না।
চুল, ত্বক ও নখের যত্নে শসা
চোখের নিচে শসার টুকরো রাখার প্রচলিত উপায়টি সত্যিই কার্যকর—এটি চোখের ফোলাভাব কমায়। রোদে পোড়া ত্বকে শসা লাগানোও সাময়িক প্রশমক হিসেবে কাজ করতে পারে (তবে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি)।
ড. ব্রুয়ার বলেন, “শসার খোসায় থাকে সিলিকা—একটি খনিজ যা চুল, ত্বক ও নখকে মজবুত রাখে।”
এই সিলিকা শসাকে ছত্রাক বা ছাঁচের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে, কারণ এর পানির পরিমাণ অনেক বেশি।
পুষ্টিগুণে কতটা সমৃদ্ধ?
অন্যান্য সবজির তুলনায় শসা পুষ্টির দিক থেকে তেমন সমৃদ্ধ নয়। এর পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ভিটামিন ও খনিজের ঘনত্ব তুলনামূলক কম।
ড. ব্রুয়ার বলেন, “পুষ্টির ঘাটতি পূরণে কেবল শসার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। ব্রকলি, কেল বা ব্রাসেলস স্প্রাউটের মতো ক্রুসিফেরাস সবজি বেশি কার্যকর।”
অ্যালার্জি হতে পারে?
“কিছু মানুষ শসার প্রোটিনে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখান,” জানান ড. ব্রুয়ার। তিনি পরামর্শ দেন, “ত্বকের ছোট জায়গায় ১৫ মিনিট শসার টুকরো লাগিয়ে দেখুন—লালচে ভাব বা চুলকানি হলে ব্যবহার বন্ধ করুন।”
শসা খাওয়ার সবচেয়ে উপকারী উপায়
শসা কাঁচা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। সালাদ, স্যান্ডউইচ বা র্যাপে ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা:
- আগেভাগে কেটে রাখলে ভিটামিন নষ্ট হয়
- খোসা ছাড়াবেন না, এতে থাকে ফাইবার ও খনিজ
- ভেতরের বীজ বা নরম অংশ ফেলে দেবেন না, এতে আছে পানি ও আঁশ
শসার স্মুদি বানাতে পারেন—অর্ধেক শসা, ২৫০ মিলি নারিকেল পানি, এক টুকরো পুদিনা, একটি কিউই ও কয়েকটি পালং পাতা একসঙ্গে ব্লেন্ড করুন। এটি দেহে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
শসা কেটে পনির, সালমন, অ্যাভোকাডো বা ক্রিম ফ্রেশের সঙ্গে খেতে পারেন, কিংবা শুধু গোলমরিচ ছিটিয়ে নিলেই টাটকা স্ন্যাকস তৈরি।
আচার বা ফারমেন্ট করা শসাও হজমতন্ত্রের জন্য ভালো, যদিও এতে আঁশ ও সিলিকার পরিমাণ কিছুটা কম থাকে।
শেষ কথা:
পুষ্টিবিদদের মতে, শসা হয়তো ভিটামিনের ভাণ্ডার নয়, কিন্তু এটি শরীরকে আর্দ্র রাখে, হজমে সহায়তা করে, ত্বক ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক টুকরো শসা রাখাই হতে পারে সহজ ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।










