বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নতুন স্টাডি পারমিটের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কানাডা। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির প্রথম ফেডারেল বাজেটে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়, যা অভিবাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে নতুন আন্তর্জাতিক স্টাডি পারমিটের সংখ্যা যেখানে ৩ লাখ ৫ হাজার ৯০০ ছিল, ২০২৬ সালে তা কমে দাঁড়াবে মাত্র ১ লাখ ৫৫ হাজারে। পরবর্তী দুই বছর (২০২৭ ও ২০২৮) এই সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজারে সীমিত রাখা হবে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংস্থা আইসিইএফ মনিটরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি কানাডার ইতিহাসে অন্যতম বড় সীমাবদ্ধতা।
অর্থমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেইন বলেন, “আমরা আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিচ্ছি এবং কানাডাকে টেকসই মাত্রায় ফিরিয়ে আনতে চাই।”
এর আগেও কানাডা সরকার ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ ও চলতি বছর ১০ শতাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা কমিয়েছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপের ফলে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে সংকট তৈরি হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে কানাডায় নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমে গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি নতুন কোনো “কাটছাঁট” নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলন। হায়ার এডুকেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যাসোসিয়েটসের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স আশার বলেন, “যে ‘কাটছাঁট’ বলা হচ্ছে, তা মূলত বাস্তবতার সঙ্গে লক্ষ্য সংখ্যাকে সামঞ্জস্য করার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ক্ষতি ভবিষ্যতে নয়, আগেই হয়ে গেছে।”
অন্যদিকে, বাজেটে আন্তর্জাতিক প্রতিভা আকর্ষণের লক্ষ্যে ১৩ বছরের জন্য ১.৭ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ১.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই তহবিল থেকে বিশ্বজুড়ে ১,০০০-এরও বেশি মেধাবী গবেষক, পিএইচডি ও পোস্টডক্টরাল ফেলো নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে শিক্ষাখাতের নেতারা সরকারের নীতিতে দ্বন্দ্ব দেখছেন। ইউনিভার্সিটি অব উইনসর-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস বুশ বলেন, “একদিকে সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা সীমিত করছে, আবার অন্যদিকে বিশ্বসেরা প্রতিভা আকর্ষণের পরিকল্পনা করছে—এটা পরস্পরবিরোধী। আমাদের প্রকৌশল, বিজ্ঞান, ট্রেড ও স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কর্মী দরকার; এজন্য ল্যাব, ইন্টার্নশিপ ও শিক্ষার্থী সহায়তা অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।”
এছাড়া বাজেটে বিদেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি ও শ্রমঘাটতি মোকাবিলায় ৫ বছরে ৯৭ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও নির্মাণ খাতে এই বিনিয়োগ বিশেষভাবে কার্যকর হবে বলে সরকার আশা করছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি দেশের অবস্থান নিয়ে সমালোচনার মুখে কানাডিয়ান ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন (CBIE) একটি নতুন প্রচারণা শুরু করেছে, “রিইনট্রোডিউস কানাডা টু দ্য ওয়ার্ল্ড”, যার লক্ষ্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে কানাডার ইতিবাচক ভাবমূর্তি পুনর্গঠন।
তবে ৫ নভেম্বর ঘোষিত এক নীতিসংস্কারে সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা ফেডারেল স্টাডি পারমিটের সীমাবদ্ধতার আওতার বাইরে থাকবে।
ইউ-১৫ কানাডার প্রধান নির্বাহী রবার্ট অ্যাসেলিন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা টেকসইভাবে বিশ্বসেরা প্রতিভা আকর্ষণ ও উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।”










