বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই থেকে আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামুন এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী ছিলেন।
সোমবার রায় ঘোষণার আগে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একে আনা হয়। তিনি ছিলেন এই মামলায় একমাত্র আটক আসামি। অন্য দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং পলাতক হিসেবে বিবেচিত।
ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে যে পাঁচটি অভিযোগেই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলাটি দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং এই মামলাতেই প্রথমবারের মতো কোনো আসামি অ্যাপ্রুভার হিসেবে আত্মসমর্পণ করেন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলায় সাবেক আইজিপি মামুনকে এবং পরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়।
এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় চলতি বছরের ১ জুন। অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনাকে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে নৃশংসতার পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। মোট পাঁচ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচারকাজ চলাকালে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয় অডিও, ভিডিও, ফোনালাপের রেকর্ডিং এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রতিবেদন। আদালতে দেখানো হয় যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া এবং রংপুর অঞ্চলে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের ভিডিও ও তথ্যপ্রমাণ।
এই মামলায় মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দেন ৫৪ জন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৩ আগস্ট এবং শেষ হয় ৮ অক্টোবর। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেনি প্রসিকিউশন। তবে তার আইনজীবী খালাস আবেদন করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম মর্তূজা মজুমদার, সদস্য বিচারপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের প্যানেল আজকের রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষে আইনজীবী এবং জুলাই আগস্টে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা আওয়ামী লীগ শাসনামলে সাড়ে পনেরো বছরে গুম ও খুনের অভিযোগে এবং আরেকটি মামলা করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের ঘটনার বিষয়ে।








