বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি: নারী উন্নয়নকর্মী ও সামাজিক সংগঠক শেফালিকা ত্রিপুরাকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯-এর ১৪ ধারায় পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরাকে অস্থায়ীভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনিই এই দায়িত্ব পালন করবেন।
দায়িত্ব পেয়ে শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি সবার সহযোগিতা চাই। জেলা পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’
এর আগে সোমবার দুর্নীতি, অসদাচরণ ও স্বজনপ্রীতির একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাকে পরিষদের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। আলাদা এক পরিপত্রে জানানো হয়, পরিষদের ১৪ জন সদস্যকে অবমূল্যায়ন, কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ, ঠিকাদারদের বিল আটকে রেখে ঘুষ গ্রহণ, শিক্ষক বদলিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।
এমন এক সময় শেফালিকা ত্রিপুরা এই দায়িত্ব পেলেন, যখন জেলা পরিষদে আস্থার সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতা বিরাজ করছিল। শেফালিকা ত্রিপুরা একজন অভিজ্ঞ নারী উন্নয়নকর্মী, যিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়ি নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন।
১৯৬০ সালের ৬ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী তৈইলাইফাং গ্রামে জন্ম শেফালিকার। বাবা গোপাল কৃঞ্চ ত্রিপুরার চাকরির সূত্রে পাহাড়ের নানা এলাকায় কাটে শৈশব। সেই সময়ের সহিংসতা, দারিদ্র্য ও নারীদের অবহেলা কাছ থেকে দেখেই তার মধ্যে গড়ে ওঠে এক ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা।
মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি কদমতলি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। অল্প বয়সেই বিয়ে হয় অলিন্দ্র ত্রিপুরার সঙ্গে। তবে স্বামীর উৎসাহে লেখাপড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকেন। ১৯৮৪ সালে দীঘিনালায় গিয়ে গড়ে তোলেন নারীদের জন্য প্রথম সমিতি। পরে এর কার্যক্রম স্থানান্তর করেন জেলা সদরে। বর্তমানে সংগঠনটির নাম “খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি”। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ও সভানেত্রী।
২০০৩ সালে এনজিও ব্যুরো থেকে রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর সংগঠনটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি পায়। নারী অধিকার, পারিবারিক সহিংসতা, পরিবেশ উন্নয়ন, সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তিনি ও তার সংগঠনের সদস্যরা।
শেফালিকা ত্রিপুরার নেতৃত্বে এবার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান পদে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। স্থানীয়রা আশাবাদী, তার অভিজ্ঞতা ও গ্রহণযোগ্যতা এ সংকটকালে পরিষদকে নতুন গতিপথে পরিচালনা করতে পারবে।