Home সারাদেশ হেলে পড়ল রাবির শেরে বাংলা হল, ৩০০ শিক্ষার্থী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত

হেলে পড়ল রাবির শেরে বাংলা হল, ৩০০ শিক্ষার্থী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: দেশজুড়ে অনুভূত ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলে নতুন ফাটল ও কাঠামোগত দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর হলটির পশ্চিম ব্লকের একাংশ হেলে পড়ার অভিযোগ তুলেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। আতঙ্কে তারা দৌড়ে হল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পরবর্তীতে নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। পুরোনো ও দুর্বল কাঠামোর কারণে শেরে বাংলা হল দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। ভূমিকম্পের পর দেয়াল, ছাদ ও বিমে নতুন ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।

হল সংসদের সহ-সভাপতি রানা হোসাইন বলেন, শেরে বাংলা হল অনেক দিন ধরেই বাসযোগ্য নয়। আজকের ঘটনার পর এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা নিরাপদ নয়। অবিলম্বে সব শিক্ষার্থীকে নিরাপদ স্থানে নেওয়াই একমাত্র সমাধান।

আবাসিক শিক্ষার্থী ইমরান জানান, ভূমিকম্পের পর একপাশে বড় ফাটল দেখা দেয় এবং সাম্প্রতিক সংস্কারের অংশও ভেঙে যায়। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এখন সরাসরি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, অথচ এতদিন প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিয়ে এসেছে।

পরিদর্শনে এসে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, তিনতলা ভবনের বহু জায়গায় খসে পড়া অংশ ও ফাটল দেখা গেছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে বুয়েট বা রুয়েটের বিশেষজ্ঞ দিয়ে টেকনিক্যাল পরিদর্শন প্রয়োজন।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানান, অসংখ্য নতুন ফাটল দেখা গেছে, তাই শিক্ষার্থীদের হলে রাখা ঠিক হবে না। জুমার নামাজের পর জরুরি বৈঠকে দ্রুত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন এবং মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে প্রক্টর, উপ-উপাচার্য ও রাকসু নেতাদের উপস্থিতিতে হলটি পরিদর্শন করা হয়। রাকসুর সহ-সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, জুমার পর প্রশাসন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দিলে ছাত্রসংসদ নিজেরাই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়াতে বাধ্য হবে।

দুপুর আড়াইটায় প্রশাসন ভবনের সভায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, উপাচার্য ও হল প্রশাসনের সম্মিলিত বৈঠকে শেরে বাংলা হলের সব শিক্ষার্থীকে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে নতুন হলে বিদ্যুৎ-সংযোগ, পানি-ব্যবস্থা ও খাটের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় শুরুতে শিক্ষার্থীদের কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হবে।

হল প্রাধ্যক্ষ জানান, প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হলে শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে কক্ষে উঠতে পারবেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কক্ষ বরাদ্দের তালিকা সম্পন্ন না হওয়ায় তারা আজ রাতেই নতুন হলে যেতে পারছেন না।

একইসঙ্গে, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বেহাল অবস্থার কারণে মন্নুজান হলের সহস্রাধিক ছাত্রীও তীব্র নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন। হলটির ছাদ, দেয়াল ও বাথরুমের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিদিনই নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আজকের ভূমিকম্পে সেখানেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রোকেয়া হল সংসদের সহ-সভাপতি সুমাইয়া জাহান বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ আগেই জানিয়েছিল আগের মতো মেরামত করে স্থায়ী সমাধান হবে না। ভূমিকম্পে ছাদ খসে পড়ার ঘটনা আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও ভীত করেছে। আমরা স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দ্রুত কর্মসূচি দেব।

১৯৬২ সালে নির্মিত শেরে বাংলা হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। বহু বছর ধরে এটি অবাসযোগ্য ঘোষণা ও নতুন হলে বরাদ্দের দাবি জানানো হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আজকের ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপত্তা অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।