বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নোয়াখালী: রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত আসনের এক সাবেক নারী সংসদ সদস্যের কাছে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন ‘সমন্বয়ক’ রিয়াদ। পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। শনিবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে সংগঠন থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। রিয়াদের গ্রেফতারের পর তার অতীত জীবন নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের নবীপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে রিয়াদের পৈতৃক ভিটা। বাবা আবু রায়হান প্রায় আট বছর আগে পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। রিয়াদের মা সামসুন্নাহার একসময় অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এমন এক পরিবারের সন্তান রিয়াদ গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর এক বছরে গুলশানে বাড়ি, দামি গাড়ি, বিলাসী জীবন, সবকিছু কীভাবে অর্জন করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী।
তার দাদা ওয়ালীউল্যাহও ছিলেন রিকশাচালক। সেই বংশধারায় বেড়ে ওঠা রিয়াদ এসএসসি পাস করেন নবীপুর হাই স্কুল থেকে। পরে ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি ছাত্রলীগে যোগ দেন আবদুল কাদের মির্জার হাত ধরে। এরপর ঢাকায় গিয়ে ভর্তি হন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং যুক্ত হন কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।
পরে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে রিয়াদ হয়ে ওঠেন একটি নতুন রাজনৈতিক বলয়ের সক্রিয় মুখ। গত জুলাই মাসে কথিত গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি সাবেক এমপি ও মন্ত্রীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজির কাজে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ।
নবীপুরে গিয়ে দেখা যায়, আগের ভাঙাচোরা কাঁচা ঘরটি আর নেই। তার জায়গায় নির্মাণাধীন পাকা দালান। পাশেই রাখা রয়েছে নতুন একটি দামি প্রাইভেট কার। এলাকাবাসীরা বলছেন, এমন হঠাৎ পরিবর্তনে তারা স্তম্ভিত।
রিয়াদের মা সামসুন্নাহার বলেন, আমরা না খেয়ে ওরে শহরে পাঠাইছি। সে তো ভালোই পড়ত। এখন টিভিতে দেখি পুলিশ ওরে ধইরা নিয়াছে। কীভাবে কী হইল, কিছুই বুঝতেছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, দিনমজুরের ছেলে হঠাৎ করে গুলশানে বাড়ি করল, দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। এই দৃশ্য দেখে আমরা বিস্মিত।
নবীপুর হাই স্কুলের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, এই ছেলেটা খুবই গরিব ছিল। স্কুলে সবাই মিলে চাঁদা তুলে ওর বই খাতা কিনত। আজ শুনছি সে বড় নেতা, আবার চাঁদাবাজও। মনই মানে না।
রিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করতেন। ফেসবুকে একাধিক উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী এমপির সঙ্গে ছবি পোস্ট করে নিজের প্রভাব বিস্তার করতেন। তার গ্রেফতারের সময় যে ছবি ছড়িয়েছে, তাতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা গেছে তার পাশে।
গ্রামের সাধারণ পরিবার থেকে হঠাৎ করে এমন উত্থান কিভাবে সম্ভব হলো, তা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে। অনেকেই বলছেন, এটি কেবল একজন রিয়াদের কাহিনি নয়, এটি একটি বড় ব্যবস্থার অসঙ্গতির প্রতিচ্ছবি।