বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আজ ৮ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৭ সাল থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে এ দিবস পালন হয়ে আসছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য— “Promoting literacy in the digital era” বা ডিজিটাল যুগে সাক্ষরতা প্রসার। মূল লক্ষ্য হলো—প্রযুক্তিনির্ভর রূপান্তরের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে সবার জন্য সমতা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
বৈশ্বিক চিত্র
ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭৩.৯ কোটি কিশোর, যুবা ও প্রাপ্তবয়স্ক মৌলিক সাক্ষরতা থেকে বঞ্চিত, যাদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী। ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ২৭.২ কোটি শিশু ও কিশোর-কিশোরী বিদ্যালয়ের বাইরে ছিল। এমনকি বিদ্যালয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশও প্রাথমিক পর্যায়ের ন্যূনতম পাঠদক্ষতা অর্জন করতে পারেনি।
ডিজিটাল যুগে সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য চেনার সক্ষমতা কম থাকায় তরুণরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওইসিডি দেশগুলোর মাত্র ৯ শতাংশ ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ডিজিটাল টেক্সটে ‘তথ্য’ ও ‘মতামত’ আলাদা করতে পারে। ফলে সাক্ষরতার ধারণাকে এখন পড়া-লেখার বাইরেও ডিজিটাল দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের অবস্থা
বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে ৭ বছর বা তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৭৭.৯ শতাংশ। অর্থাৎ, ২২.১ শতাংশ মানুষ এখনও নিরক্ষর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত হার আরও কম হতে পারে। অনেক সময় পরিসংখ্যানে ‘কার্যকর সাক্ষরতা’ নয়, বরং শুধু পড়তে-লিখতে পারার সাধারণ মান ধরা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ অনুযায়ী, ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৭৫.৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘কার্যকর সাক্ষরতা’ নিশ্চিত না হলে সংখ্যার বৃদ্ধি কাগজে-কলমেই সীমিত থাকবে।
বৈশ্বিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার
আজ প্যারিসে ইউনেস্কোর সদরদপ্তরে আয়োজিত বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে আলোচনার পাশাপাশি প্রদান করা হচ্ছে ইউনেস্কো ইন্টারন্যাশনাল লিটারেসি প্রাইজেস। দুটি বিভাগ—কিং সিজং পুরস্কার (মাতৃভাষাভিত্তিক সাক্ষরতা) ও কনফুসিয়াস পুরস্কার (গ্রামীণ ও প্রযুক্তি-সহায়ক সাক্ষরতা কর্মসূচি)—এ মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এ বৈশ্বিক আলোচনায়।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, সাক্ষরতা শুধু পড়া-লেখা জানা নয়, বরং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর অধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার ভিত্তি। বাংলাদেশে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযুক্তি-সমর্থিত শিক্ষা, স্থানীয় ভাষায় উপযোগী শিক্ষাসামগ্রী তৈরি এবং ‘সাধারণ’ ও ‘কার্যকর’ সাক্ষরতার মধ্যে সুষ্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি।
ডিজিটাল যুগে সাক্ষরতা মানে কেবল বই পড়া নয়—বরং তথ্য যাচাই, প্রযুক্তি ব্যবহার ও সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দিবসকে কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক সাক্ষরতা আন্দোলন জোরদার করা উচিত।