বিনোদন ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে যখন আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ফলে নারীদের মধ্যে বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ বাড়ছে, তখন পাকিস্তানে ‘শাদী সিজন’ বা বিয়ের ধুম বরাবরের মতোই উৎসবমুখর। কিন্তু এই উৎসবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লৈঙ্গিক সহিংসতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে প্রবীণ অভিনেত্রী সাবা ফয়সালের একটি মন্তব্যের জেরে।
কী বলেছিলেন সাবা ফয়সাল?
সম্প্রতি নিদা ইয়াসিরের এক মর্নিং শো-তে উপস্থিত হয়ে সাবা ফয়সাল বলেন, “ছেলের মায়ের সবচেয়ে বড় ভুল হলো বিয়ের প্রথম দিন থেকেই পুত্রবধূকে তার পছন্দমতো পোশাক পরতে দেওয়া।” শুধু তাই নয়, দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার ‘টিপস’ হিসেবে তিনি তার স্বামীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শশুড়বাড়িতে যদি পুত্রবধূ নিজেকে ‘বধির এবং বোবা’ (Goonga-Behra) হিসেবে উপস্থাপন করে, তবেই জীবন সুন্দর হবে।
‘ছদ্মবেশী অধিকারকর্মী’ নাকি পিতৃতন্ত্রের রক্ষক?
সাবা ফয়সালের এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে তাকে ‘নারীবিদ্বেষী’ এবং ‘অমানবিক’ বললেও, বিশ্লেষকদের একটি অংশ বিষয়টিকে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, সাবা ফয়সাল আসলে নারীদের সতর্ক করছেন!
তিনি স্পষ্ট করে দিলেন যে, দক্ষিণ এশীয় গতানুগতিক সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে মানেই একজন নারীর নিজের সত্তা, পছন্দ এবং কণ্ঠস্বর বিসর্জন দেওয়া। যে নারী নিজে কয়েক দশক ধরে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, তার মুখে এমন ‘নিয়ন্ত্রণকামী’ কথা আসলে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থারই প্রতিফলন।
প্রতিবেদনের মূল পর্যবেক্ষণসমূহ:
পোশাকের স্বাধীনতা: একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী কী পরবেন, তা শাশুড়ির মর্জির ওপর নির্ভর করা ‘পিতৃতান্ত্রিক নরক’ বা ‘Patriarchal Hell’-এরই নামান্তর।
অস্তিত্ব বিলীন করার পরামর্শ: সুখী হওয়ার জন্য ‘কথা না বলা’ বা ‘না শোনার’ অভিনয় করার অর্থ হলো—সংসারে টিকে থাকতে হলে নারীকে নিজের ব্যক্তিত্ত্ব বিসর্জন দিয়ে রোবট হয়ে থাকতে হবে।
দ্বিমুখী আচরণ: অনেক নারী শোষিত হয়েও পরবর্তীতে নিজের পুত্রবধূর ওপর একই শোষণ চাপিয়ে দিয়ে আনন্দ পান, যাকে সমাজ ‘ডিসিপ্লিন’ বা শৃঙ্খলা বলে চালিয়ে দেয়।
জনরোষ ও অভিনেত্রীর সাফাই
তীব্র সমালোচনার মুখে সাবা ফয়সাল একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছেন। সেখানে তিনি ‘বোবা-কালা’ শব্দ দুটি ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন। তিনি দাবি করেন, বিবাহিত জীবনে ‘মানিয়ে নেওয়া’ বা ‘একীভূত’ হওয়া প্রয়োজন।
তবে সমালোচকদের প্রশ্ন—এই ‘মানিয়ে নেওয়া’র দায় কি কেবলই নারীর? কেন একজন পুরুষকে বিয়ের পর তার পোশাক বা খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হয় না?
সাবা ফয়সালের এই বক্তব্য পাকিস্তানি এবং দক্ষিণ এশীয় নারীদের জন্য একটি ‘পাবলিক সার্ভিস অ্যানাউন্সমেন্ট’ হিসেবে কাজ করছে। এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে কেন নারীরা আজও ‘মেরা জিসম মেরি মারজি’ (আমার শরীর, আমার সিদ্ধান্ত) স্লোগান তুলতে বাধ্য হন। ২০২৬ সাল এবং তার পরবর্তী সময়ে বিনোদন জগতে এমন বৈষম্যমূলক মানসিকতার ব্যক্তিদের প্রচার করার আগে গণমাধ্যমগুলোর আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আপনি কি মনে করেন সাবা ফয়সালের এই মন্তব্যগুলো আমাদের সমাজের রক্ষণশীল মানসিকতারই একটি বহিঃপ্রকাশ? এ বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে পারেন।










