মীর কামাল, দুবাই: দুবাই মানেই বিস্ময়, দুবাই মানেই আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা একের পর এক রেকর্ড। এবার সেই মুকুটে যুক্ত হলো আরও একটি নতুন পালক। মেঘের রাজ্য ভেদ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল বিশ্বের সর্বোচ্চ হোটেল—‘সিয়েল টাওয়ার’।
২০২৫ সালের এই সময়ে দাঁড়িয়ে দুবাই মারিনা এলাকা এখন পর্যটকদের নতুন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কী আছে পৃথিবীর এই সর্বোচ্চ বিলাসবহুল হোটেলে।
কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে জানলার বাইরে তাকালেন, দেখলেন নিচে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা, আর অনেক নিচে ঝিকমিক করছে আরব সাগরের নীল জলরাশি। কোনো কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, দুবাইয়ের নতুন হোটেল ‘সিয়েল’-এ এটিই এখন বাস্তবতা। ৭৫ তলা বিশিষ্ট আগের রেকর্ডধারী ‘জেভোরা’ হোটেলকে টপকে ৮২ তলার এই স্থাপত্য বিস্ময় এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুবাইয়ের আকাশ।
আকাশ ছোঁয়ার গল্প: ৩৬৫ মিটারের বিস্ময়
দুবাইয়ের বিখ্যাত রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ‘দ্য ফার্স্ট গ্রুপ’-এর এই প্রজেক্টটি যখন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন থেকেই এটি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ৩৬৫.৫ মিটার (১,১৯৯ ফুট) উচ্চতার এই হোটেলটি যেন মরুভূমির বুকে এক কাঁচের প্রাসাদ। এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যা কেবল উচ্চতাই বাড়ায়নি, বরং বাতাসের গতিবেগ এবং তাপমাত্রাকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
কী আছে এই হোটেলের ভেতরে?
সিয়েল টাওয়ারে রয়েছে ১,০০০টিরও বেশি বিলাসবহুল স্যুইট এবং গেস্ট রুম। প্রতিটি রুম থেকেই দুবাইয়ের আইকনিক ‘পাম জুমেইরা’ এবং আরব সাগরের ৩৬০-ডিগ্রি দৃশ্য দেখা যায়। হোটেলের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক জাপানিজ এবং অ্যারাবিক ফিউশন, যা অতিথিদের দেবে এক রাজকীয় অনুভূতি।
আকাশে সাঁতার: ছাদের ওপর ইনফিনিটি পুল
এই হোটেলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ছাদ বা রুফটপ। ৮১ ও ৮২ তলায় অবস্থিত এর ‘স্কাই বার’ এবং ‘ইনফিনিটি পুল’ সম্ভবত বিশ্বের অন্যতম সেরা ইনস্টাগ্রাম-স্পট হতে যাচ্ছে। পর্যটকরা বলছেন, এই পুলে সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা অনেকটা আকাশে ওড়ার মতোই রোমাঞ্চকর। সূর্যাস্তের সময় এখান থেকে দুবাইয়ের আকাশ যে রঙ ধারণ করে, তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন সারা বিশ্বের ট্রাভেল ব্লগাররা।
বাতা ও প্রকৃতির খেলা
সিয়েল টাওয়ারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর ৩০০ মিটার দীর্ঘ সুবিশাল ‘এট্রিয়াম’ বা উন্মুক্ত স্থান। এখানে উল্লম্বভাবে সাজানো বাগান বা ভার্টিক্যাল গার্ডেন রয়েছে, যা বহুতল ভবনের মাঝেও এক টুকরো সবুজের ছোঁয়া দেয়। প্রাকৃতিকভাবে বাতাস চলাচলের এই ব্যবস্থা হোটেলটিকে পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে।
পর্যটনের নতুন গন্তব্য
বুর্জ খলিফার পর সিয়েল টাওয়ার এখন দুবাইয়ের স্কাইলাইনের নতুন আইকন। যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার খোঁজ করেন, তাদের জন্য এই হোটেলটি একটি স্বপ্নের গন্তব্য।
দুবাই আবারও প্রমাণ করল, উচ্চতার দৌড়ে তাদের থামানোর কেউ নেই। মেঘের দেশে কয়েকটা রাত কাটাতে চাইলে আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতেই পারে বিশ্বের এই নতুন উচ্চতম হোটেল।
লাইক দিন 👍, শেয়ার করুন 🔁, এবং মন্তব্যে জানান আপনার মতামত!










