Home ধর্ম ও জীবন জুমার দিনের আলো: সুরা কাহাফ পাঠের অসীম ফজিলত

জুমার দিনের আলো: সুরা কাহাফ পাঠের অসীম ফজিলত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ইসলামে জুমার দিনকে এক বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন এবং মুমিনদের জন্য একটি সাপ্তাহিক ঈদের সমতুল্য। এই বরকতময় দিনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য রহমত ও ক্ষমার দুয়ার খুলে দেন। জুমার দিনের অসংখ্য আমলের মধ্যে একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ আমল হলো পবিত্র কোরআনের ১৮ নম্বর সুরা, ‘সুরা আল-কাহাফ’ তিলাওয়াত করা।

নূরের প্রতিশ্রুতি: দুই জুমার মধ্যবর্তী আলো

সুরা কাহাফ পাঠের সবচেয়ে পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতটি সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তিনি বলেছেন:

“যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমার মধ্যবর্তী সময়কে নূর বা আলো দ্বারা আলোকিত করে রাখা হবে।”

এই ‘নূর’ বা আলো কেবল বাহ্যিক কোনো আলো নয়, বরং এটি এক আধ্যাত্মিক দ্যুতি যা মুমিনের জীবনকে নানাভাবে আলোকিত করে। এই নূরের তাৎপর্য ব্যাপক:

  • হেদায়েতের আলো: এই নূর হলো সঠিক পথের দিশা। যে ব্যক্তি নিয়মিত এই সুরা পাঠ করেন, আল্লাহ তাকে যাবতীয় অন্ধকার, সংশয় ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার তৌফিক দান করেন।
  • পাপ থেকে সুরক্ষা: এই আলো পাঠকারীকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। তার অন্তরে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা এমনভাবে जागিয়ে তোলে যে, শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যায়।
  • আত্মিক প্রশান্তি: দুনিয়ার নানা দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মাঝে এই নূর মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা নিয়ে আসে। সে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করার শক্তি খুঁজে পায়।
  • কিয়ামতের দিনের আলো: হাদিস শরিফে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য পায়ের পাতা থেকে আসমান পর্যন্ত এক বিশাল নূর प्रकाशित হবে, যা হাশরের ময়দানের অন্ধকারকে আলোকিত করে দেবে।

দাজ্জালের ফিতনা থেকে আত্মরক্ষা

آخر الزمان বা শেষ যুগে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর ফিতনা। তার ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা মুমিনদের জন্য কঠিন পরীক্ষা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এই ভয়াবহ ফিতনা থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে সুরা কাহাফের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।” অন্য বর্ণনায় শেষ দশ আয়াতের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

এই সুরার মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ও শিক্ষা রয়েছে, যা মানুষকে ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকতে এবং যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি মোকাবিলা করতে শেখায়। তাই এর নিয়মিত পাঠ ও এর অর্থ অনুধাবন করা দাজ্জালের মতো বড় ফিতনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আধ্যাত্মিক বর্ম হিসেবে কাজ করে।

কেন সুরা কাহাফ এত গুরুত্বপূর্ণ?

এই সুরায় আল্লাহ তায়ালা চারটি শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যা মানুষের জীবনের চারটি প্রধান পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত:

১. আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীর ঘটনা: এটি ঈমান বা বিশ্বাসের পরীক্ষা।
২. দুই বাগানের মালিকের ঘটনা: এটি ধন-সম্পদের পরীক্ষা।
৩. মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা: এটি জ্ঞান বা ইলমের পরীক্ষা।
৪. জুলকারনাইন বাদশার ঘটনা: এটি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পরীক্ষা।

এই চারটি ঘটনাই আমাদের শিক্ষা দেয় যে, জীবনের সব অবস্থায়—সে যত কঠিনই হোক না কেন—কীভাবে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে হয় এবং তাঁর সাহায্য চাইতে হয়।

কখন এবং কীভাবে পাঠ করবেন?

ইসলামি দিন গণনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকেই জুমার দিন শুরু হয়ে যায় এবং শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত তা বলবৎ থাকে। তাই এই সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করলেই হাদিসে বর্ণিত ফজিলত লাভ করা সম্ভব।

শুধু তোতা পাখির মতো তিলাওয়াত না করে এর অর্থ ও শিক্ষা অনুধাবন করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ এই সুরার প্রতিটি আয়াতই মুমিনের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য এক একটি বাতিঘর।

উপসংহার

জুমার দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত কেবল একটি প্রথাগত আমল নয়, বরং এটি এক সাপ্তাহিক আধ্যাত্মিক নবায়ন। এটি আমাদের জীবনকে আল্লাহর নূরে আলোকিত করার, ঈমানকে মজবুত করার এবং শেষ জামানার ভয়ংকর ফিতনা থেকে সুরক্ষিত থাকার এক অব্যর্থ উপায়। আসুন, আমরা এই মূল্যবান আমলটিকে আমাদের জীবনের অংশ করে নিই এবং এর অশেষ কল্যাণ ও বরকত লাভে সচেষ্ট হই।