তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: দেশের বাজারে আবারও রেকর্ড গড়ল সোনার দাম। ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে মূল্যবান এই ধাতু। একদিনে ভরিতে বেড়েছে ৪ হাজার ৬১৮ টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) নতুন দামে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস এ তথ্য জানায়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম বাড়ার পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন এবং বিনিয়োগকারীদের সোনার প্রতি ঝোঁক বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। নতুন এই দাম ১৪ অক্টোবর, মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
নতুন দামে ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি গ্রাম ১৮ হাজার ৩২৩ টাকা। ২১ ক্যারেট ১৭ হাজার ৪৯০ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১৪ হাজার ৯৯১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ প্রতি গ্রাম ১২ হাজার ৪৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রুপার দামও বেড়েছে—২২ ক্যারেট প্রতি গ্রাম ১ হাজার ৫৩২ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ হাজার ৫০৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৪৩৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি গ্রাম ১ হাজার ৩২৬ টাকা।
এক বছর আগের একই সময়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৬১ টাকা। অর্থাৎ বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার টাকার বেশি, যা বৃদ্ধির হার হিসেবে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫২ শতাংশ।
এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, উত্তরা এলাকার সোনার দোকান ঘুরে দেখা গেছে—বিক্রি কার্যত প্রায় থমকে গেছে। দোকানগুলোতে ক্রেতা বলতে গেলে হাতে গোনা। দোকানের কর্মচারিরা দিনের পর দিন বসে থাকছেন। বিক্রেতারা জানালেন, অনেকে শুধু দাম জেনে চলে যাচ্ছেন, কেউ কেউ বলছেন, ‘এখন সোনা কেনা মানে লোকসান’।
অন্যদিকে অনেকে পুরনো সোনা বিক্রি করতে দোকানে ভিড় করছেন। বিশেষ করে যারা এক–দুই বছর আগে কম দামে গহনা কিনেছিলেন, তারা এখন সেই পুরনো সোনা বিক্রি করে লাভ তুলতে চাইছেন। দোকানিদের ভাষায়, “নতুন সোনা বিক্রি নেই বললেই চলে, এখন পুরনো গহনা গলানোই প্রধান কাজ।”
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম এখন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডলার শক্তিশালী হওয়ায় ও বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। তার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের বাজারেও।
বাজুসের কর্মকর্তারা জানান, দেশে সোনার প্রকৃত চাহিদা বছরে ৩০ থেকে ৪০ টনের মতো। এর মধ্যে বৈধ পথে আসে মাত্র ২০ শতাংশ। বাকিটা আসে যাত্রী ব্যাগেজ বা অনানুষ্ঠানিক পথে। অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান পুরনো সোনা গলিয়ে নতুন গহনা তৈরি করছে। এভাবেই দেশের বাজারে চাহিদা কিছুটা পূরণ করা হয়।
তারা আরও বলেন, সরকার যদি বৈধ পথে সোনা আমদানি সহজ করে, তাহলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। এখনকার মতো পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে সোনা।
এদিকে বাজুসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই রাজধানীজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন, ‘সোনার দিন ফুরোল মধ্যবিত্তের’, কেউ আবার বলছেন, ‘বাজারে সোনা নয়, কেবল দামই ঝলমল করছে।’
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, টাকার মান আরও কমলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলে সামনে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে।