Home আন্তর্জাতিক সোনার মেডেল ফেরালেন ছাত্রী

সোনার মেডেল ফেরালেন ছাত্রী

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রী রাবেহা আবদুরেহিম। তারই খেসারত দিতে হল তাঁকে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বক্তৃতার সময় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দেওয়া হল না রাবেহাকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে নিজের সোনার মেডেল প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই ছাত্রী।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাকি ছাত্রছাত্রীদের মতোই এসেছিলেন রাবেহা। স্নাতকোত্তরে ভাল ফল করার দরুণ সোনার মেডেল পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আগেই তাঁকে বাইরে ডেকে নিয়ে যান এক পুলিশকর্মী। রাবেহার অভিযোগ, পুলিশের স্পেশ্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট তাঁকে ডেকে বলেন “আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে। বাইরে আসুন।“ ছাত্রীর দাবি এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেক হলের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তবে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আসেননি কোনও পুলিশকর্মী। বাইরে থেকে ততক্ষণে রাবেহা বুঝতে পারেন রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা শুরু হয়ে গিয়েছে।

কেন তাঁকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না এই প্রশ্ন করায় অন্য এক পুলিশকর্মী বলেন, সঠিক কারণ তাঁদের জানা নেই। তবে এসএসপি এমনটাই চেয়েছেন। রাবেহার অভিযোগ, “এরপরেই পুলিশকর্মীরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করেন। আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাতে শুরু করেন। জানি না কী এমন হয়েছিল যে আমায় অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দেওয়া হল না। হয়তো আমি নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলাম তাই এমনটা হয়েছে আমার সঙ্গে।”

রাষ্ট্রপতি চলে যাওয়ার পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢোকার অনুমতি পান রাবেহা। ভিতরে গিয়ে নিজের সার্টিফিকেট নেন তিনি। তবে প্রত্যাখ্যান করেন সোনার মেডেল। ছাত্রীর কথায়, “গোটা ব্যাপারটায় ভীষণ অপমানিত হয়েছি আমি। তাই সোনার মেডেল ফিরিয়ে দেওয়াটাই আমার প্রতিবাদের ভাষা। আশা করি কেন্দ্রের কাছে আমার এই বার্তা পৌঁছবে।“ এর পাশাপাশি রাবেহা এও বলেন যে এখন গোটা দেশ জুড়ে যা হচ্ছে, বিশেষ করে ছাত্রসমাজের প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে সেইসবের প্রতিবাদেও নিজের গোল্ড মেডেল ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, রাবেহা নাগরিকত্ব আইন বিরোধী স্লোগান তুলতে পারেন এমন সম্ভাবনা নাকি ছিল। রাষ্ট্রপতির সামনে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাতে কোনও অশান্তি না হয় সেই জন্যই হলের বাইরে বের করে দেওয়া হয় রাবেহাকে। কারণ তিনি রাষ্ট্রপতির হাত পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রত্যাখ্যান করতে পারেন বলে অনুমান করেছিল পুলিশ। যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢোকার আগে রাবেহাকে নাকি তাঁর হিজাব খুলতে বলা হয়েছিল। রাজি না হওয়ায় অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই ছাত্রীকে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাবেহার সঙ্গে যে এমনটা হয়েছে সেটা তারা জানতেই পারেনি। রেজিস্ট্রার বি চিত্রার কথায়, “আমরা জানি না কেন ওকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যেখানে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসার জন্য ওঁর নাম সিলেক্ট হয়েছে সেখানে ওকে ঢুকতে না দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। অনুষ্ঠান যখন প্রায় শেষের মুখে তখন আমিই ওকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে শুরু করি। রাবেহার সঙ্গে যা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। গোটা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হবে।“

এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন পুদুচেরির এসপি রবিকুমার। বরং তিনি বলেছেন যে রাবেহার সব অভিযোগ মিথ্যে। রবিকুমারের কথায়, “প্রথমে উনি বললেন আমরা ওঁকে হিজাব খুলতে বলেছি। তারপর বললেন উনি মুসলমান বলে ওঁকে আলাদা চোখে দেখা হচ্ছে। এই সব অভিযোগ মিথ্যে। অনুষ্ঠানে হিজাব পরা এক ছাত্রীই ট্রে-তে করে মেডেল সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। অনুষ্ঠানের ভিডিওতেই সেটা দেখতে পাওয়া যাবে। ওই ছাত্রীর সব অভিযোগই মিথ্যে।“

পাশাপাশি রবিকুমার আরও বলেন , “রাবেহা এসএফআই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এই প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তাই কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপতির সামনে যেন কোনওরকম অশান্তির পরিবেশ তৈরি না হয়। তাই রাবেহার সঙ্গে আরও কয়েকজন পড়ুয়াকে বাইরে থাকতে বলার সিদ্ধান্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। বাকিরা কেউ এ নিয়ে কোনও কথাই বলছে না। শুধু এই ছাত্রীই সমস্যা করছেন।“

তবে এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও তিনজন পড়ুয়া সোনার মেডেল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, যেহেতু রাষ্ট্রপতি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে সই করে সেটাকে পাশ করিয়েছেন তাই তাঁর হাত থেকে মেডেল নেবেন না।

Translate »