আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে মক্কার বাসস্থান ত্যাগ করে মিনায় পৌঁছাতে শুরু করেছেন হজযাত্রীরা। আরবি বর্ষপঞ্জির জিলহজ মাসের ৮ তারিখে ‘ইয়াওমুত তারওয়া’ হিসেবে পরিচিত এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
পবিত্র হজ পালনে রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় তলবিয়া পাঠ করে আল্লাহর প্রশংসা করছেন মুসল্লিরা। পবিত্র মিনায় তাঁবু শহরের দিকে এই যাত্রা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এক মহাসমাবেশে পরিণত হয়েছে। এবার হজে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের ১৪৭টিরও বেশি দেশ থেকে আগত প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার আন্তর্জাতিক হজযাত্রী এবং বিপুলসংখ্যক অভ্যন্তরীণ মুসল্লি।
মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলোর দেখভালকারী রয়্যাল কমিশনের হজ ও ওমরাহ বিভাগের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আল-কারনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক হজযাত্রীরা ইতিমধ্যে মক্কায় পৌঁছেছেন এবং তাদের আগমনপর্ব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত ৩৬ দিন ধরে মক্কা ও মদিনার মধ্যে চলাচল নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ মুসল্লিরাও সোমবার রাত থেকে মক্কায় আসতে শুরু করেন এবং তাওয়াফ কুদুম সম্পন্ন করে মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে মিনায় যাত্রা করেন।
ড. কারনি আরও জানান, মিনায় যাত্রা এবং পরবর্তী দিন আরাফাতে গমনকালে তিনটি ভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থায় মুসল্লিদের চলাচল সম্পন্ন হবে। মাশায়ের ট্রেনে প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার মুসল্লি এবং অন্যান্য প্রচলিত ও সমন্বিত পরিবহনে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার মুসল্লি আরাফাতের পথে রওনা হবেন।
এদিকে মিনার বিখ্যাত মসজিদ আল-খায়ফে পবিত্র নামাজ আদায়ের জন্য ২৭ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে নামাজের চাটাই বিছানো হয়েছে। ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, দাওয়াহ ও গাইডেন্স মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মসজিদটিতে এবার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত শীততাপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড মনিটরিং ব্যবস্থা।
এ বছর প্রচণ্ড গরমের আশঙ্কায় হজে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সৌদি সরকার অতুলনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। উপস্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. আবদুল্লাহ আসির জানান, হজ উপলক্ষে প্রায় ৫০ হাজার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি জানান, গরমজনিত অসুস্থতার জন্য ৭০০টিরও বেশি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেগুলিতে রয়েছে বিশেষ ফ্যান ব্যবস্থা। পাশাপাশি চালু হয়েছে তিনটি অস্থায়ী হাসপাতাল এবং ৭১টি জরুরি সেবাকেন্দ্র।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র প্রকৌশলী খালেদ আল-তালআ জানিয়েছেন, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৯৮ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। এ বছর হাসপাতালের শয্যাকাপাসিটিও ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে এবারের হজে অভূতপূর্ব পরিমাণ নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করেছে সৌদি সরকার, যাতে মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে ইবাদত পালন করতে পারেন।