সৈয়দ আহমেদ, রিয়াদ ( সৌদি আরব) থেকে: আগামী হজ মৌসুম এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের বার্তা নিয়ে এল মুসলিম বিশ্বে। গ্রীষ্মের দগদগে রোদের নিচে দীর্ঘ পথ পাড়ি, শরীরে জলস্বল্পতার আতঙ্ক, আর সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবীর চেষ্টায় প্রাণ বাঁচানো-এসব দৃশ্য হয়তো আগামী দুই দশক আর দেখা যাবে না। সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র নিশ্চিত করেছে, ১৪৪৬ হিজরির হজ ছিল গ্রীষ্মকালীন হজের অন্তিম অধ্যায়। আগামী ২৫ বছর হজ পড়বে অপেক্ষাকৃত শীতল ঋতুতে। প্রথমে বসন্ত, পরে শীত, তারপর শরৎ।
ইসলামি চান্দ্রবর্ষের স্বাভাবিক গতিপথ অনুযায়ী প্রতি বছর হজ ১০-১১ দিন এগিয়ে আসে। সেই ধারায় এখন হজ প্রবেশ করছে এমন এক আবর্তে, যেখানে তীব্র গরম নয়, বরং থাকবে ঠান্ডা বাতাস, বৃষ্টিস্নাত পথ অথবা সহনীয় তাপমাত্রা। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ হামজা আল-দোসারি বলেন, “এটি এক যুগান্তকারী মোড়। হজের অভিজ্ঞতা শুধুই আধ্যাত্মিক নয়, এর রয়েছে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির দিকও। যখন তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তখন প্রার্থনায় মনোসংযোগ রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ে।”
হজ করতে আসা হাজিদের জন্য গ্রীষ্মের উত্তাপ শুধু কষ্টই নয়, কখনও কখনও তা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী। মিনায় বা আরাফার ময়দানে দীর্ঘ সময় কাটানো, হাঁটাহাঁটি করা কিংবা ভিড়ের মধ্যে অপেক্ষা, সবকিছুই অতিরিক্ত উত্তাপে অনেকের জন্য ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই আবহাওয়ার এই পালাবদল হাজিদের জন্য শুধু স্বস্তি নয়, অনেকাংশে নিরাপত্তাও বয়ে আনছে।
এ বছর হজে অংশ নেওয়া সারা আল-আবদুলমোহসেন জানান, “তাপমাত্রা ছিল অসহনীয়। আমি যখন মিনায় ছিলাম, তখন মোবাইলে তাপমাত্রা দেখাচ্ছিল ৪৭ ডিগ্রি। আমি মনে মনে বলছিলাম, আল্লাহ, শুধু একটু ছায়া আর একটু পানি দিন।” সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বললেন, “ভবিষ্যতের হজ যদি শীতল মৌসুমে হয়, তবে তা শুধু স্বস্তিকর নয়, বরং গভীর মনোযোগ ও ভাবগম্ভীরতাও ফিরিয়ে আনবে প্রার্থনায়।”
তবে শীত বা বসন্তে হজ হলেও, সেটি যে পরিকল্পনাবিদদের কাজ সহজ করে দেবে তা নয়। বর্ষা, ঠান্ডা হাওয়া কিংবা হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ প্রতিটি মৌসুমেরই রয়েছে নিজস্ব চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই পরিবর্তন খুলে দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দরজা। পরিবেশবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়ন সহজ হবে, বিদ্যুৎ চাহিদা কমবে, বয়স্ক বা দীর্ঘদিন অসুস্থ হাজিরাও সাহস করে রওনা দিতে পারবেন হজের পথে।
সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম লক্ষ্য হলো টেকসই হজ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। গ্রীষ্মের পরিবর্তে শীত ও বসন্তে হজ হওয়ার অর্থ, অধিক সংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা স্বাস্থ্যগত কারণে এতদিন সাহস করতে পারেননি, এবার সেই পবিত্র সাধনায় অংশ নিতে পারবেন।
তবে এই পরিবর্তনের মাঝেও অনেকেই হয়তো মনে করবেন গরমের সেই হজও ছিল এক পরীক্ষা, এক আত্মত্যাগের সময়, যা বিশ্বাসের দৃঢ়তাকে আরও গভীর করত। তারপরও ইতিহাস বলছে, সময়ের সাথে সাথে বদলায় আচার, বদলায় বাস্তবতা তবে বদলায় না ঈমানের শক্তি।
🔁 প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন
📰 আরও এমন প্রতিবেদন পেতে ভিজিট করুন BusinessToday24.com