Home তথ্য প্রযুক্তি ডিজিটাল যুগের হানিট্র্যাপ

ডিজিটাল যুগের হানিট্র্যাপ

প্রেম, প্রলোভন ও গুপ্তচরবৃত্তি: সেক্স স্পাইয়ের গোপন ইতিহাস

পর্ব ৪:

তারিক-উল-ইসলাম:

প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি যেমন বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে, তেমনি গুপ্তচরবৃত্তির জগতে খুলে দিয়েছে এক নতুন অধ্যায়, ডিজিটাল হানিট্র্যাপ। এখন আর তথ্য আদায়ের জন্য মোমবাতির আলোয় সিগারেট হাতে আকর্ষণীয় কোনো নারী বা পুরুষকে প্রয়োজন হয় না; প্রয়োজন হয় কেবল একটি প্রোফাইল, একটি বার্তা, আর এক ক্লিকের সম্পর্ক।

২১ শতকের গোড়ায় যখন ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের ব্যক্তিজীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল, তখন থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বুঝে ফেলল—প্রলোভনের খেলা অনলাইনে আরও নিখুঁতভাবে খেলা সম্ভব। হানিট্র্যাপের কৌশলও তাই বদলে গেল। আগে যেখানে একটি রাতের সাক্ষাতে গোপন নথি আদায় হতো, এখন সেখানে এনক্রিপ্টেড চ্যাট, ভিডিও কল বা ডেটিং অ্যাপের সম্পর্কই হয়ে উঠছে তথ্য আহরণের আধুনিক মাধ্যম।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ও কর্পোরেট গোয়েন্দারা “সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং” কৌশল ব্যবহার করে এমন সম্পর্ক তৈরি করেন যা আবেগের ওপর ভর করে লক্ষ্য ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে তোলে। ২০১০-এর দশকে চীনা ও রুশ সাইবার ইউনিটগুলোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো এমন একাধিক ডিজিটাল হানিট্র্যাপ অপারেশনের অভিযোগ তোলে, যেখানে তরুণ, আকর্ষণীয় অনলাইন প্রোফাইল ব্যবহার করে সামরিক বা গবেষণা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গোপন তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে “ডিপফেক” প্রযুক্তি এই হুমকিকে আরও ভয়াবহ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি বাস্তবসম্মত ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে এখন এমনকি অস্তিত্বহীন ব্যক্তিও অনলাইন প্রেমিক বা প্রেমিকা হিসেবে হাজির হতে পারে। এতে শুধু রাষ্ট্রীয় তথ্য নয়, ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট সিকিউরিটিও ভেঙে পড়ছে।

ডিজিটাল যুগে তাই “প্রেমের ফাঁদ” আর শুধু আবেগের নয়, এটি তথ্যযুদ্ধের কৌশল। মানুষ যত বেশি নিজের জীবন অনলাইনে উন্মুক্ত করছে, হানিট্র্যাপ ততই নিখুঁত হচ্ছে—আর সেই প্রলোভনের জাল ছিঁড়তে ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে সত্য ও ছায়ার পার্থক্য করা।