হেলথ ডেস্ক: গর্ভাবস্থায় এবং জন্মের পর প্রথম দুই বছরে চিনি কম খেলে ভবিষ্যতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে, নতুন গবেষণা এমন ইঙ্গিতই দিয়েছে।
চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল দ্য বিএমজে-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ইউকে বায়োব্যাংকের ৬৩ হাজার ৪৩৩ জন মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এরা সবাই ১৯৫১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫৬ সালের মার্চের মধ্যে জন্ম নেওয়া এবং কারও পূর্বে হৃদ্রোগের ইতিহাস নেই।
গবেষকেরা ১৯৪০ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে ‘চিনি রেশনিং’-এর আওতায় থাকা ৪০ হাজার ৬৩ জন মানুষের তথ্যের সঙ্গে রেশনিংয়ের বাইরে থাকা ২৩ হাজার ৩৭০ জনের তথ্য তুলনা করেন। দেখা যায়, গর্ভধারণের সময় এবং জন্মের পরের প্রথম দুই বছর যাদের চিনি গ্রহণ সীমিত ছিল, তাদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। হৃদ্রোগজনিত হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকি কমেছে ২৫ শতাংশ, হার্ট ফেলিয়ারে ২৬ শতাংশ, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে ২৪ শতাংশ, স্ট্রোকে ৩১ শতাংশ এবং হৃদ্যন্ত্রজনিত মৃত্যুঝুঁকি কমেছে ২৭ শতাংশ।
চিনি গ্রহণ কীভাবে হৃদ্স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে—তা জানতে ব্রিটিশ কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ড. অলিভার গুটম্যানের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক।
স্বল্পমেয়াদি প্রভাব
ড. গুটম্যান বলেন, একসঙ্গে অনেক চিনি খেলে স্বল্প সময়ের জন্য রক্তচাপ বাড়তে পারে এবং হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে। খুব মিষ্টি খাবার খেলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়ার অনুভূতি অনেকেই পান—কারণ রক্তে চিনি বেড়ে গেলে দেহকে তা সামলাতে বেশি কাজ করতে হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি
উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণ দীর্ঘমেয়াদে শরীরে ধীরে ধীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, যা হৃদ্রোগের দিকে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, অতিরিক্ত চিনি ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ এলডিএল বাড়ায় এবং ‘ভাল কোলেস্টেরল’ এইচডিএল কমিয়ে দিতে পারে। এলডিএল বেড়ে গেলে রক্তনালিতে জমাট তৈরি হয়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
চিনি বেশি খাওয়া স্থূলতা ও টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ায়। উচ্চ রক্তে–চিনি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে, যা ডায়াবেটিসের প্রধান কারণগুলোর একটি। তিনি বলেন, এগুলো একে অন্যকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেয়—একপ্রকার ‘দুষ্টচক্র’ তৈরি হয়।
এছাড়াও অতিরিক্ত চিনি ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়, যা রক্তনালির সংকোচন ও শক্ত হয়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ।
বয়স বাড়লে ঝুঁকিও বাড়ে
ড. গুটম্যান বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব জমতে থাকে। দীর্ঘদিনের খারাপ খাদ্যাভ্যাস ষাটের পরে এসে হৃদ্রোগের বড় ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে।
করনীয়
তিনি পরামর্শ দেন, চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার–পানীয় কমিয়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে। প্রয়োজনে মিষ্টতার জন্য ফলের রস বা মধুর মতো প্রাকৃতিক বিকল্প বেছে নিতে পারেন। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ‘ফ্রি সুগার’ গ্রহণ ৩০ গ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।
নিয়মিত ব্যায়াম হৃদ্স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম হৃদ্যন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রক্তচাপ কমায় এবং চিনি ও চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
হৃদ্যন্ত্র সুস্থ আছে কি না বোঝার জন্য বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে যাদের পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস আছে, যারা ধূমপায়ী, ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা আগে উচ্চ রক্তচাপ ছিল—তাদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ব্যবধান আরও কম হওয়া উচিত।










