Home সারাদেশ দ্রুতগতির বলি মোটরসাইকেল আরোহী: রাতে হাসাড়া ব্রিজের ঢালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

দ্রুতগতির বলি মোটরসাইকেল আরোহী: রাতে হাসাড়া ব্রিজের ঢালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মুন্সিগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও একজন। দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে, হাসাড়া ব্রিজের ঢালে ঢাকামুখী লেনে।

নিহতের নাম আলিমুল, তার বাড়ি রংপুরে। আহত ব্যক্তি আবদুর রহমান ঢাকার মুগদা মান্ডা এলাকার বাসিন্দা।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ দেওয়ান আজাদ জানান, “দুই যুবক মোটরসাইকেলে মাওয়া থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একটি ট্রাক পেছন থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে তারা সড়কে ছিটকে পড়ে যান। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলিমুলকে মৃত ঘোষণা করেন।”

এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় দেশের মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং ভারী যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা। বিশেষ করে রাতে দীর্ঘপথে চলাচলকারী ট্রাকগুলো বেশিরভাগ সময়ই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলে, যার কারণে প্রাণহানি ঘটছে প্রায়ই।

মোটরসাইকেল আরোহীরা মহাসড়কে চলাচলের সময় সাধারণত তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিতে থাকেন, কারণ তারা অন্যান্য ভারী যানবাহনের চাপে অসহায় হয়ে পড়েন। এই দুর্ঘটনাটি একদিকে যেমন অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা, তেমনি এটি সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্রমাগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবিও।

এই ঘটনায় দায়ী ট্রাক ও চালকের অবস্থান সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। যথাযথ তদন্ত এবং অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক হলেও, এটি এখন দিনদিন দুর্ঘটনার “হটস্পট” হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠছে। এই সড়কে গতি, নিয়ম লঙ্ঘন, এবং পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তৈরি করেছে।

সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা, স্পিড গান এবং সিগনাল ব্যবস্থা থাকলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেকাংশেই ‘ম্যানুয়াল’ নির্ভর, যা রাতের বেলায় প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে এমন দুর্ঘটনার পরেও অনেক সময় দায়ী যানবাহন চিহ্নিত করা যায় না, কিংবা চালক সহজেই পালিয়ে যায়।

রাতের বেলা মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের আধিক্য দেখা যায়। এসব যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। চালকরা দীর্ঘ সময় ড্রাইভ করে ক্লান্ত থাকেন, কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েন, আবার অনেকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালান—এগুলো সবই দুর্ঘটনার বড় কারণ।

মোটরসাইকেল চালকরা তুলনামূলকভাবে ছোট যানবাহন নিয়ে সড়কে চলেন। মহাসড়কে কোনো আলাদা লেন না থাকায় তারা একই লেনে ট্রাক, বাসের সঙ্গে চলে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আলাদা ‘বাইক লেন’ নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মৃত্যু হয়। অথচ প্রতি বছর নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত কম। চালকদের প্রশিক্ষণ, যানবাহনের ফিটনেস যাচাই, এবং ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির মতো মৌলিক বিষয়গুলো এখনও গুরুত্ব পাচ্ছে না।মোটর ভেহিকেল আইন অনুযায়ী বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ে গুরুতর শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই আইনের বাস্তব প্রয়োগ কতটা হচ্ছে? আলিমুলের মৃত্যুর দায় শুধু ট্রাক চালকের নয়, এটি একটি কাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি, যেখানে অনেকেই দায় এড়াতে অভ্যস্ত।

আলিমুলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরেকটি পরিবার আজ শোকাহত। এই একক ঘটনা নয়, বরং পুরো সড়ক ব্যবস্থার একটি প্রতীকী বিপর্যয়। এখনই সময়, কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে—নিয়মিত নজরদারি, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, চালকদের প্রশিক্ষণ, এবং দুর্ঘটনার পর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

নাহলে আলিমুলের মতো আরও কতজন প্রাণ হারাবে, আমরা শুধুই সংখ্যা গুনে যাবো।