হেলথ ডেস্ক: শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে নানাবিধ শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত বা কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য শীতকাল একটি বাড়তি সতর্কতার সময়। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, শীতকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা গ্রীষ্মের তুলনায় প্রায় ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাই এই সময়ে হৃদযন্ত্রের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতল আবহাওয়ায় শরীর নিজের তাপমাত্রা ধরে রাখতে রক্তনালিকে সংকুচিত করে। এই সংকোচনের ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। যাঁদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের জন্য এই চাপ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি প্রধান কারণে শীতকালে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ঠান্ডা পরিবেশে রক্তনালির সংকোচনের ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কাজ করতে হয়, যা অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায়। শীতকালে অনেকেই শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে। পাশাপাশি শীতে কম পানি পানের কারণে রক্ত ঘন হয়ে হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে।
শীতকালে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন উচ্চ রক্তচাপের রোগী, যাঁরা পূর্বে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন, যাঁরা ওবেসিটি বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং ধূমপায়ীরা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শীতে হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে কয়েকটি অভ্যাস জরুরি। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে শরীর উষ্ণ রাখতে হবে, বিশেষ করে মাথা, কান, হাত ও পা ভালোভাবে ঢেকে রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিত এবং অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। শীতকালে মৌসুমি শাকসবজি, ফলমূল ও পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি এবং পর্যাপ্ত নিদ্রা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জনের পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, শীতকালে বুকে ব্যথা, অস্বাভাবিক ঘাম, শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তি—এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। সচেতন জীবনধারা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষাই শীতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর মূল উপায় বলে মনে করেন তারা।










