Home পর্যটন মরুভূমির বুকে হাত: চিলির ‘হ্যান্ড অফ দ্য ডেজার্ট’

মরুভূমির বুকে হাত: চিলির ‘হ্যান্ড অফ দ্য ডেজার্ট’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চিলির উত্তরে বিস্তৃত আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক প্রান্তরগুলোর একটি। হাজার হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে কেবল বালু, পাথর আর পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি। এমন এক নির্জন প্রান্তরে হঠাৎ যদি চোখে পড়ে আকাশ ছুঁতে চাওয়া এক বিশাল মানবহাত, তা যে কোনো ভ্রমণকারীর বিস্ময় জাগাতে বাধ্য। স্থানীয়রা একে বলে “ম্যানো দেল দেসিয়ের্তো”—বাংলায় যার অর্থ “মরুভূমির হাত”। আন্তর্জাতিকভাবে এটি পরিচিত Hand of the Desert নামে।

জন্ম ইতিহাস: শিল্পীর প্রতিবাদী কণ্ঠ

এই ভাস্কর্যের জন্ম ১৯৯২ সালে। সৃষ্টিকর্তা ছিলেন চিলির খ্যাতিমান ভাস্কর মারিও ইরাররাজাবাল। প্রায় ১১ মিটার উঁচু হাতটি তৈরি হয়েছে লোহা ও কংক্রিটের সংমিশ্রণে। ইরাররাজাবাল তার শিল্পকর্মে বারবার মানবিক যন্ত্রণা, নিপীড়ন ও অসহায়ত্বের প্রতীক তুলে ধরেছেন।
চিলির সামরিক শাসন ও স্বৈরতন্ত্রের সময়ে যে দমন-পীড়ন চলে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজতেই এই হাত। এটি যেন নিঃশব্দে জানিয়ে দেয়, মানুষ অসহায় হলেও তার অস্তিত্বের আর্তি কখনও হারিয়ে যায় না।

মরুভূমির নীরবতায় মানবিক আর্তি

আতাকামার মতো শুষ্ক ও নির্জন পরিবেশে একা দাঁড়িয়ে থাকা এই হাত যেন মানুষের অন্তর্গত ভয়, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। আকাশ ছুঁতে চাওয়া আঙুলগুলো মনে করিয়ে দেয়—মানুষ যতই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হোক, তার আশাবাদ আর অস্তিত্বের লড়াই কখনও থেমে যায় না।
রাতের আঁধারে তারাভরা আকাশের নিচে এই ভাস্কর্য আরও রহস্যময় হয়ে ওঠে। পর্যটকরা বলেন, তখন মনে হয় হাতটি যেন আকাশের দিকে সাহায্যের জন্য আর্তি জানাচ্ছে।

পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

চিলির উত্তরাঞ্চলীয় শহর আন্তোফাগাস্তা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ভাস্কর্য। অবস্থান দূরবর্তী হলেও প্রতিবছর হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক সেখানে ভিড় জমান। মরুভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অনেকেই শুধুমাত্র এই ভাস্কর্য দেখতেই যাত্রা করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, “হ্যান্ড অফ দ্য ডেজার্ট” এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পকে নতুন গতি দিয়েছে। হোটেল, রিসোর্ট, গাড়ি ভাড়া ও স্থানীয় গাইডদের ওপর এর প্রভাব স্পষ্ট। ফলে কেবল শিল্পকর্ম নয়, অর্থনীতিতেও ভাস্কর্যটি অবদান রাখছে।

সংরক্ষণ চ্যালেঞ্জ

বিশাল ভাস্কর্য হলেও এটি রক্ষা করা সহজ নয়। দুষ্টু পর্যটকদের কেউ কেউ এর গায়ে গ্রাফিতি লিখে যায়, কেউ বা আঁকিবুকি করে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চালান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে ভাস্কর্যটির চারপাশে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক প্রতীকী পরিচয়

আজ ‘হ্যান্ড অফ দ্য ডেজার্ট’ কেবল চিলির নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম পরিচিত পাবলিক আর্ট ভাস্কর্য। এটি দেখে কেউ ব্যাখ্যা করেন মানবিক প্রতিবাদ, কেউ দেখেন মুক্তির ডাক, কেউবা দেখেন অস্তিত্বের নিঃসঙ্গতা।
আতাকামার অন্তহীন নীরবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই হাত যেন মানুষের পক্ষ থেকে প্রকৃতির কাছে প্রশ্ন তোলে—
মানুষ আসলে কতটা দুর্বল, আর কতটা শক্তিশালী?