Home সারাদেশ মা কুকুরের আর্তনাদ থামেনি: ৮ ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে হত্যার দায়ে নারী...

মা কুকুরের আর্তনাদ থামেনি: ৮ ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে হত্যার দায়ে নারী গ্রেফতার

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী: মানুষের নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত রূপ দেখল পাবনার ঈশ্বরদী। সদ্য জন্ম নেওয়া ৮টি অবলা কুকুরছানাকে জীবন্ত অবস্থায় বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটেছে উপজেলা পরিষদ চত্বরে। মানুষের এই নিষ্ঠুরতায় যখন বাকরুদ্ধ এলাকাবাসী, তখন মৃত সন্তানদের পাশে মা কুকুরটির করুণ আর্তনাদ ও নীরব অপেক্ষার দৃশ্য কাঁদিয়েছে সবাইকে।

এই অমানবিক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী নিশি বেগমকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে প্রশাসনের নির্দেশে ওই পরিবারকে সরকারি কোয়ার্টার থেকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ঘটনার আদ্যোপান্ত
গত ৩০ নভেম্বর, রোববার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের সরকারি আবাসিক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই কোয়ার্টারে বসবাসরত ‘ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’-এর কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের বাসার সিঁড়ির নিচে আশ্রয় নিয়েছিল একটি মা কুকুর ও তার ৮টি সদ্যজাত ছানা।

অভিযোগ রয়েছে, হাসানুর রহমানের স্ত্রী নিশি বেগম মা কুকুরের অগোচরে ছানাগুলোকে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে পাশের পুকুরে ফেলে দেন। পরদিন সোমবার সকালে স্থানীয়রা পুকুরে একটি বস্তা ভাসতে দেখেন। সেটি উদ্ধার করে পাড়ে আনলে ভেতরে ৮টি মৃত কুকুরছানা পাওয়া যায়।

হৃদয়বিদারক দৃশ্য
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছানাগুলো নিখোঁজ হওয়ার পর রোববার সারা রাত মা কুকুরটি পাগলের মতো তার সন্তানদের খুঁজেছে। তার আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সোমবার সকালে যখন মৃত ছানাগুলো উদ্ধার করা হয়, তখন মা কুকুরটি ভেজা শরীরে মৃত সন্তানদের পাশে দীর্ঘক্ষণ ঠায় বসে ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয় এবং দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

খোঁড়া যুক্তি ও প্রশাসনিক কঠোরতা
গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত নিশি বেগম দাবি করেন, ছানাগুলো সিঁড়ির নিচে নোংরা করায় তিনি বিরক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি ওদের মারিনি, শুধু পুকুরপাড়ে গাছের নিচে রেখে এসেছিলাম।” তবে ছানাগুলো বস্তাবন্দি অবস্থায় পুকুরে পাওয়ায় তার এই দাবি ধোপে টেকেনি।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বিষয়টিকে ‘চরম অমানবিক’ উল্লেখ করে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে:
১. উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাদী হয়ে ‘প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯’ অনুযায়ী থানায় মামলা দায়ের করেন।
২. পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে নিশি বেগমকে গ্রেফতার করে।
৩. জনরোষ ও প্রশাসনিক চাপে অভিযুক্তের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
প্রাণী অধিকারকর্মী এবং স্থানীয়রা বলছেন, “একটি অবলা প্রাণীর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ হতে পারে না। এই ঘটনা আমাদের সমাজের মানবিক অবক্ষয়ের দিকেই আঙুল দিয়ে দেখায়।” তারা এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়।