বাণিজ্যিকীকরণে কঠোর শাস্তি
আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সরকার ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, অবৈধ অঙ্গ পাচার রোধ এবং দাতা সংকট কমানোর লক্ষ্যেই ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৯ সালের আইনটি রহিত হলো।
নতুন অধ্যাদেশে অঙ্গদাতা এবং গ্রহীতার যোগ্যতায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত দুটি সংযোজন হলো ইমোশনাল ডোনার এবং সোয়াপ ট্রান্সপ্লান্টের বৈধতা।
ইমোশনাল ডোনার বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে যিনি রোগীর নিকট আত্মীয় না হলেও আবেগীয় সম্পর্কের কারণে স্বেচ্ছায় অঙ্গ দান করতে পারেন। শর্ত হলো দীর্ঘদিনের পরিচয় থাকতে হবে এবং মেডিকেল বোর্ড নিশ্চিত করবে যে এতে কোনো আর্থিক লেনদেন নেই।
সোয়াপ ট্রান্সপ্লান্টে দুটি দাতা গ্রহীতা জুটি পারস্পরিক সম্মতিতে অঙ্গ বিনিময় করতে পারবেন যদি উভয় ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ বা টিস্যুর মিল না থাকে।
অধ্যাদেশে নিকট আত্মীয়ের পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। পিতা মাতা পুত্র কন্যা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী ছাড়াও আপন চাচা ফুফু খালা মামা দাদা দাদি নানা নানি নাতি নাতনি এবং খালাতো মামাতো ফুপাতো ও চাচাতো ভাই বোন এখন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
ব্রেইন ডেথ ঘোষণার প্রক্রিয়া আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। মেডিসিন নিউরোলজি এবং অ্যানেসথেসিওলজি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি ব্রেইন ডেথ নিশ্চিত করবে। ক্যাডাভেরিক বা মৃতদেহ থেকে অঙ্গ সংগ্রহের ক্ষেত্রে দাতার বয়স দুই থেকে সত্তর বছরের মধ্যে হবে।
জীবিত দাতার ক্ষেত্রে বয়সের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আঠারো থেকে পঁয়ষট্টি বছর। অন্যদিকে গ্রহীতার বয়স দুই থেকে সত্তর বছরের মধ্যে হলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
অধ্যাদেশে অবৈধ লেনদেন ও তথ্য গোপনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। নিকট আত্মীয়তা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। অঙ্গ কেনাবেচায় জড়িত থাকলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা দশ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। অপরাধে চিকিৎসক বা হাসপাতাল জড়িত থাকলে রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপন তদারকিতে একটি জাতীয় কমিটি গঠন এবং অঙ্গদাতা ও গ্রহীতার তথ্য সংরক্ষণে জাতীয় রেজিস্টার তৈরির নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সরকার আশা করছে, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে এবং বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। একই সঙ্গে অবৈধ অঙ্গ পাচার প্রতিরোধেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লাইক দিন 👍, শেয়ার করুন 🔁, এবং মন্তব্যে জানান আপনার মতামত!










