বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: গত ১০ জুলাই ২০২৫ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, যেখানে একের পর এক শিক্ষার্থীর মনোজয়ী কৃতিত্ব নজর কেড়েছে। সেই স্রোতে এক নাম আলাদা করে আলোড়ন তুলেছে অনামিকা দেবনাথ। ১৩০০ নম্বরের মধ্যে অসাধারণ ১২৬৪ নম্বর পেয়ে কুমিল্লা বোর্ডে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেছে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের এই মেধাবী কন্যা।
অনামিকা কুমিল্লা মহানগরের দিগম্বরীতলা এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা দিলীপ কুমার দেবনাথ, যিনি উত্তরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার, এবং মা বিনা রাণী দেবনাথ, কুমিল্লা সদর উপজেলার ঝাকুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পরিবার এবং শিক্ষকদের পূর্ণ সমর্থন আর সঠিক দিকনির্দেশনায় আজ অনামিকা তার নাম জুড়েছে শিক্ষার মানচিত্রে।
অসাধারণ ফলাফল: নম্বরের বিশ্লেষণ
অনামিকা বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে পেয়েছে ১৯২ নম্বর, ইংরেজিতে ১৮৯, গণিতে সম্পূর্ণ ১০০, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৪, হিন্দু ধর্মীয় বিষয়ে ৯৭, পদার্থবিদ্যায় ৯৮, রসায়নে ৯৭, উচ্চতর গণিতে ৯৯, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৪৮, জীববিজ্ঞানে ১০০, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ১০০ এবং ক্যারিয়ার এডুকেশনে ৫০ নম্বর পেয়েছেন। এই সমগ্র যোগফলই এনে দিয়েছে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৬৪ নম্বরের সোনালী প্রাপ্তি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের নজরে
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রুনা নাছরিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, বোর্ড থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করা হয় না। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মার্কশিট দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় নম্বর প্রকাশ করছে এবং সেখান থেকেই ‘সেরা’ পরিচিতি পেয়েছেন অনামিকা।
অধ্যবসায় আর পরিকল্পনার ফল
অনামিকা নিজেও জানিয়েছেন, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক ও প্রশাসনের যুগোপযোগী পাঠদানের জন্য এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে পরীক্ষার আগের তিন মাস ক্লাস শেষে দৈনিক অন্তত ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করার জন্য ‘স্পেশাল শিডিউল’ নিয়েছিলেন। তার নিয়মিত অধ্যবসায় এবং মনোযোগের কথা শুনে বোঝাই যায়, মেধার পেছনে কঠোর পরিশ্রম কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবারের গর্ব
তার মা বিনা রাণী দেবনাথ বলেন, “আমাদের অনামিকা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় অত্যন্ত মনোযোগী। ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সংশ্লিষ্ট সবাই যে যত্ন ও খেয়াল রেখেছেন, তার ফলই আজ আমরা দেখছি।”
শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা
অনামিকার এই সাফল্য কেবল তার ব্যক্তিগত গর্ব নয়, বরং সমগ্র শিক্ষার্থী সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা। সে বলেছে, “নিয়মিত ক্লাস করা, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ভালো ফল করতে পারে।”
কুমিল্লা বোর্ডের সার্বিক ফলাফল
এই বছর ৬টি জেলার সমন্বয়ে গঠিত কুমিল্লা বোর্ডে পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৬৩.৬০ শতাংশ। এছাড়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসনুভা ইসলাম তোহা, যিনি ১২৬১ নম্বর অর্জন করেছেন।
অনামিকার এই অসাধারণ সাফল্য দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য এক আলোজ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। নিয়মিত পরিশ্রম, পরিবারের সহযোগিতা এবং গুণগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলেই গড়ে তোলে এমন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। তার এই সাফল্য শিক্ষাবোর্ডের গৌরবের পাশাপাশি পুরো দেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য গর্বের।
শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন অনামিকা দেবনাথকে, তুমি শিক্ষার মাঠে কুমিল্লার গর্ব!