বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় অপরিশোধিত তেলের দাম বুধবার আরও হ্রাস পেয়েছে। এপ্রিল মাসে ব্রেন্ট ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট উভয় সূচকই তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাসিক পতনের মুখোমুখি হয়েছে।
বুধবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩.৪২ ডলার। আগের দিনের তুলনায় তা ৮৩ সেন্ট বা ১.২৯ শতাংশ কম। অপরদিকে, মার্কিন WTI সূচক ৯২ সেন্ট বা ১.৫২ শতাংশ পড়ে নেমে এসেছে ৫৯.৫০ ডলারে।
২০২১ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম এত বড় মাসিক পতন দেখা গেল। এপ্রিলজুড়ে ব্রেন্টের দর কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং WTI-র দর ১৭ শতাংশের বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বই এই ধসের মূল কারণ। গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমস্ত আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। ফলে বিশ্বের দুই বৃহৎ তেলভোক্তা দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে মন্দার আশঙ্কায় ফেলেছে বলে মনে করছে রয়টার্সের এক জরিপ।
চীনের উৎপাদন খাতে এপ্রিল মাসে গত ১৬ মাসের মধ্যে দ্রুততম সংকোচন দেখা গেছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের আস্থা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু ইতিবাচক লক্ষণ কিছুটা স্বস্তি দিলেও বাজারে তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন এখনও জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে থামাতে আগ্রহী।
তেলের দাম কমার আরেকটি বড় কারণ হলো সরবরাহ বৃদ্ধির আশঙ্কা। ওপেক এবং তাদের সহযোগী দেশগুলো আগামী ৫ মে একটি বৈঠকে বসবে। সেখানে আরও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রস্তাব তোলা হবে।
এদিকে, মার্কিন বাজারে অপরিশোধিত তেলের মজুত আগের সপ্তাহে ৩.৮ মিলিয়ন ব্যারেল বেড়েছে বলে জানায় আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট । সরকারিভাবে এই তথ্য প্রকাশ করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়।
বর্তমানে তেলের বাজারে চাহিদা হ্রাস ও সরবরাহ বৃদ্ধির দ্বৈত চাপ রয়েছে। OPEC+ এর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব তেলের দামে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে, কম মজুত এবং কিছু ক্ষেত্রে সরবরাহ হ্রাসের কারণে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৫ সালে তেলের দাম $৬৫–$৭৬-এর মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, OPEC+ এর সিদ্ধান্ত এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এই দামের ওপর প্রভাব ফেলবে