Home সম্পাদকীয় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি কি নতুন করে বিপন্ন?

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি কি নতুন করে বিপন্ন?

সম্পাদকীয়

দক্ষিণ এশিয়ায় আবার উত্তেজনার আগুন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক বহুদিন ধরেই সংঘাতপূর্ণ; তবে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নতুন করে এই উত্তেজনা বিস্ফোরিত হয়ে উঠেছে। সীমান্তে গোলাগুলি, যুদ্ধবিমানের গর্জন, কাশ্মীর ঘিরে রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্য—সব মিলিয়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি এখন রীতিমতো অস্থির।

ভারতের সেনাবাহিনী মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অন্তত নয়টি স্থানে বিমান হামলা চালায়। ভারতীয় পক্ষের দাবি, এই স্থাপনাগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটি, যারা ২২ এপ্রিল পহেলগামে সংঘটিত হামলার জন্য দায়ী। ওই হামলায় ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হন।

ভারত দাবি করেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। অপরদিকে, পাকিস্তান একে “অযৌক্তিক আগ্রাসন” আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, এতে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্তত ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পাঁচটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, যদিও ভারত তা অস্বীকার করেছে।

কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ—প্রতিবারই এই অঞ্চল দেখেছে রক্তপাত ও ধ্বংস। আজ যখন ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তখন এই উত্তেজনা কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ জাতিসংঘ—সবাই এ পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সংঘাতের প্রভাব আফগানিস্তান, ইরান, এমনকি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি সরবরাহ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও পড়তে পারে।

অস্ত্রের ভাষা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া বহুবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, কিন্তু কোনো যুদ্ধই টেকসই সমাধান দেয়নি। বরং তা নিয়ে এসেছে মানবিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক ধস এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশেই রয়েছে তরুণ জনগোষ্ঠী, প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক অংশগ্রহণের আগ্রহ। একটি যুদ্ধ এ সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এই মুহূর্তে জরুরি হলো—কূটনৈতিক সংলাপে ফেরা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও সাহস থাকলেই সম্ভাবনা আছে আস্থা নির্মাণ ও সমঝোতার।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই সংকটময় মুহূর্তে যুদ্ধ নয়, বরং শান্তি ও সংলাপের পথই একমাত্র বিচক্ষণ পন্থা। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ স্থিতি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা চায়—তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানিয়ে দুই দেশের নেতৃত্বের উচিত অতীতের ভুল না পুনরাবৃত্ত করে ভবিষ্যতের জন্য শান্তির ভিত্তি নির্মাণ করা।