Home First Lead চার্জ বাড়াচ্ছে অফডক, রপ্তানিকারকদের তীব্র আপত্তি

চার্জ বাড়াচ্ছে অফডক, রপ্তানিকারকদের তীব্র আপত্তি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা চট্টগ্রামের বেসরকারি অফডক  (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) গুলোর সেবামূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) গত সপ্তাহে এক সার্কুলারে জানায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে নতুন হারে চার্জ কার্যকর হবে। এতে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সব ধরনের চার্জ ৩০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে। একাধিক সেবাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্তকে “একতরফা ও অনাকাঙ্ক্ষিত” আখ্যা দিয়ে বলছে, এটি ‘প্রাইভেট আইসিডি রেগুলেশন ২০১৬’-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, চার্জ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো আলোচনা বা পূর্বাভাস ছাড়াই বিকডা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি এমএলও (মেইনলাইন অপারেটরস) এজেন্টদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেক এজেন্ট তাঁদের প্রিন্সিপালদের কাছে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রিন্সিপালদের ভাষ্য, ২০১৬ সালের প্রাইভেট আইসিডি রেগুলেশনের ধারা ১১.১ এবং ১১.২ অনুযায়ী, কোনো ধরনের চার্জ বাড়াতে হলে তা ট্যারিফ কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হওয়ার কথা। সেই কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি, বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিকডার সাম্প্রতিক সার্কুলারে এই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র একজন পরিচালক বিজনেসটুডে২৪-কে বলেন, “একতরফা চার্জ বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত রপ্তানি খাতের জন্য অশনি সংকেত। এমনিতেই পোশাক শিল্প বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের সিদ্ধান্ত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”

সার্কুলার ঘেঁটে জানা গেছে, রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ২০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৯ হাজার ৯০০ টাকা, ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১৩ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, গ্রাউন্ড রেন্ট ২০ ফুটে ২৫০ টাকা এবং ৪০ ফুট কনটেইনারে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি টন ল্যান্ডিং চার্জ ধরা হয়েছে ২৭০ টাকা। পাশাপাশি লেবার চার্জ, ডকুমেন্টেশন ফি, স্টাফ চার্জসহ অন্যান্য খরচও বাড়ানো হয়েছে।

বিকডা জানিয়েছে, শ্রমিক মজুরি, যন্ত্রপাতির খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, টাকার অবমূল্যায়ন ও ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে পরিচালন ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। ফলে কার্যক্রম সচল রাখতে এবং নতুন আইসিডিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হ্যান্ডলিং চার্জ সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ব্যয় বাড়লে তার যৌক্তিকতা থাকতে পারে, কিন্তু তা অবশ্যই নির্ধারিত প্রক্রিয়া ও আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত। তা না হলে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ব্যয়বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারি অফডক রয়েছে, যাদের সম্মিলিত ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৮ হাজার একক কনটেইনার। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের মোট রপ্তানির ৯৩ শতাংশ এবং আমদানির ২০ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডল করে।