বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা তিনটি মামলায় ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি পলাতক আসামিদের বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গুমের অভিযোগে করা দুটি মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর। এছাড়া, গত বছরের ১৮ ও ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, আসামিদের কোন কারাগারে রাখা হবে, তা কারা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
সকাল সোয়া ৭টায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতি:
বুধবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে সেনা কর্মকর্তাদের কড়া পাহারায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোট ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মামলার বিষয়বস্তু:
এই মামলাগুলোর মধ্যে দুটি মামলা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত। অন্য মামলাটি জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আসামিদের তালিকায় উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা:
আসামিদের তালিকায় গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সাবেক সামরিক সচিব তারেক সিদ্দিকীসহ পাঁচজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
গুম-নির্যাতন মামলার আসামিরা:
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে ১৭ জন আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন এবং কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে) রয়েছেন। এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।
এই মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক রয়েছেন। তারা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক। এছাড়াও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হকও আসামি। সংশ্লিষ্ট কিছু সূত্র অনুযায়ী, শেষোক্ত এই কর্মকর্তারা দেশ ত্যাগ করেছেন বলে নিশ্চিত তথ্য নেই।
রামপুরা ও বনশ্রী মামলার আসামিরা:
রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন, বাকি দুজন পলাতক।