মোসাদ্দেক শহিদ, ব্রিসবেন: অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ। এখানকার শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান পৃথিবীর বহু প্রবাসীকে আকর্ষণ করে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু তরুণ এখানে আসছেন পড়াশোনা, কাজ কিংবা স্থায়ী হওয়ার আশায়। তবে প্রবাসজীবন কেবল ঝলমলে নয়, এর পেছনে রয়েছে অনেক কঠিন বাস্তবতা, ত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প।
কর্মসংস্থানের বাস্তবতা
অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজার মূলত স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, নির্মাণ, কৃষি, পরিবহন ও সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রবাসীরা প্রথমদিকে অধিকাংশ সময় খণ্ডকালীন কাজ করেন, যেমন রেস্তোরাঁয় কাজ, ডেলিভারি, ক্লিনিং বা সুপারশপে সেলস। এসব কাজের মাধ্যমে তারা পড়াশোনার খরচ ও জীবিকা নির্বাহ করেন।
কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন পেশাদার খাতে—ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ কিংবা শিক্ষক হিসেবে। তবে সবসময় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই চাকরি মেলে না। অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য। ফলে অনেক মেধাবী প্রবাসীকে নিজের যোগ্যতার তুলনায় নিচু স্তরের কাজ করতে হয়, যা হতাশার জন্ম দেয়।
স্থায়ী হওয়ার লড়াই
অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে স্থায়ী ভিসা বা নাগরিকত্ব পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি পেলেও ভিসার নিয়মকানুন কঠোর হওয়ায় অনেক সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। আবার নাগরিকত্ব পাওয়ার পরও চাকরির প্রতিযোগিতা প্রবল। স্থানীয়দের সঙ্গে টেক্কা দিতে হয় আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা নিয়ে।
সামাজিক বাস্তবতা
প্রবাসজীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকা অনেককে একাকিত্বে ফেলে। বিশেষ করে নতুন আগত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও কাজের চাপের মধ্যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেন, কেউ আবার কমিউনিটি গ্রুপে যোগ দিয়ে একাকিত্ব কমানোর চেষ্টা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে বাংলাদেশি সম্প্রদায় তুলনামূলক সক্রিয়। ঈদ, পহেলা বৈশাখ কিংবা জাতীয় দিবসে তারা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যা সামাজিক বন্ধন জোরদার করে। তবে ছোট শহর বা আঞ্চলিক এলাকায় বসবাসকারীরা প্রবাসজীবনের নিঃসঙ্গতাকে বেশি অনুভব করেন।
সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা
কষ্ট ও সংগ্রামের মাঝেও অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী সফলভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা প্রযুক্তি খাতে তাঁদের অবদান বাড়ছে। কেউ কেউ স্থানীয় রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে সবকিছুর পরও বাস্তবতা হলো—অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ-সুবিধা পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন।
অস্ট্রেলিয়ার কর্মসংস্থান ও সামাজিক বাস্তবতার এই ছবিটা সহজ নয়। প্রবাসীরা যেমন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেন, তেমনি প্রতিদিন মোকাবিলা করেন অনিশ্চয়তা, কষ্ট আর মানসিক চাপের সঙ্গে। সুযোগ আছে, সাফল্যও সম্ভব, কিন্তু তা অর্জন করতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।