Home বিনোদন “আমি চাই না আমার ভুল কেউ করুক” -অ্যানান্ডার শেষ চিঠি নারীদের উদ্দেশ্যে

“আমি চাই না আমার ভুল কেউ করুক” -অ্যানান্ডার শেষ চিঠি নারীদের উদ্দেশ্যে

হেলথ ডেস্ক: প্রয়াত হলেন এমটিভির স্বর্ণযুগের তারকা ও জনপ্রিয় উপস্থাপক অ্যানান্ডা লুইস। ৫২ বছর বয়সে দীর্ঘদিনের স্তন ক্যানসারকে হার মানলেন তিনি।

তবে তাঁর এই লড়াই শুধু শারীরিক নয় ছিল চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়ার প্রশ্নেও। চিকিৎসকদের পরামর্শে ডাবল মাসটেকটমি বা উভয় স্তন অপসারণের সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গিয়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বিকল্প চিকিৎসা, প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন।

ক্যানসার ধরা পড়ে নিজেই পরীক্ষায়

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে গোসলের সময় ডান স্তনে একটি ছোট ফোলা অনুভব করেন তিনি—যেখানে আগে স্তন্যপানের সময় মায়াটাইটিস হয়েছিল।
পরের মাসে বায়োপসিতে জানা যায়, স্টেজ থ্রি স্তন ক্যানসার, যা ইতিমধ্যেই লিম্ফনোডে ছড়িয়ে পড়েছে।

“ম্যামোগ্রাম না করাটা ছিল আমার বড় ভুল”

২০২০ সালে ইনস্টাগ্রামে নিজের ক্যানসার যাত্রা জানিয়ে লুইস লেখেন, “৪০ বছর বয়সে নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করতাম, তাহলে হয়তো অনেক আগেই এটি ধরা পড়ত।”

এই দেরিতেই রোগটি পৌঁছে যায় উন্নত স্তরে।
বিকল্প পথ বেছে নেওয়া

অ্যানান্ডা নিজের মা ও কাজিনের কেমো-রেডিওথেরাপি অভিজ্ঞতা দেখে মূলধারার চিকিৎসার পথে না গিয়ে প্রথমে চেষ্টা করেন শরীরের টক্সিন দূর করার মাধ্যমে সুস্থ হতে।
তিনি নিয়মিত নেন ভিটামিন সি ইনজেকশন, হাইপারব্যারিক চেম্বার থেরাপি, কিগং, প্রার্থনা এবং শক্তিচর্চা।

করোনায় ছিন্ন হয় চিকিৎসা

২০২০ সালের কোভিড লকডাউনে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। সেই সময় তিনি অনুভব করেন টিউমার আবার বাড়ছে।

অ্যারিজোনায় নতুন চিকিৎসা

তিনি যান অ্যারিজোনায়, যেখানে ১৬ সপ্তাহ ধরে কম মাত্রার কেমো, অ্যাকুপাংচার, ক্রায়োঅ্যাবলেশনসহ বিভিন্ন ইন্টিগ্রেটিভ থেরাপি গ্রহণ করেন। এতে ক্যানসার স্টেজ থ্রি থেকে কমে আসে স্টেজ টুতে, এবং লিম্ফনোড পরিষ্কার হয়।

কিন্তু সমস্যা হয় অর্থনৈতিক দিক থেকে। বীমা না থাকায় তিনি আর এই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেননি। দুই বছরের বেশি সময় চিকিৎসা বন্ধ রাখতে হয়—একইসঙ্গে সন্তান পালন ও জীবিকা নির্বাহ করতে হয় একাই।

২০২৩ সালের অক্টোবর নাগাদ ক্যানসার আবার ফিরে আসে—স্টেজ ফোর হয়ে।

শেষ চেষ্টা ও শেষ উপলব্ধি

২০২৪ সালে আবার চিকিৎসা শুরু করেন। ১২ সপ্তাহের চিকিৎসায় উন্নতি হয়, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় তাঁর শারীরিক ক্ষয় পুরোপুরি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

অ্যানান্ডা লেখেন, “আমি জানি না অন্য পথে গেলে শেষ পর্যন্ত কোথায় থাকতাম, কিন্তু এতটুকু জানি—আমার অনেক কিছু ছিল না সেই সময়ে, যা থাকা দরকার ছিল।”

মৃত্যুর আগে নারীদের জন্য বার্তা

তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী করেন নিজের অতীত জীবনধারা—অতিরিক্ত স্ট্রেস, খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও স্ক্রিনিং এড়িয়ে যাওয়া।

তাঁর শেষ আহ্বান:
“নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করুন, ভালো ঘুমান, স্ট্রেস কমান, পরিষ্কার খাবার খান, ভিটামিন ডি ঠিক রাখুন, শরীরচর্চা করুন এবং শরীরকে ভালোবাসুন। কারণ প্রতিরোধই আসল চিকিৎসা।”

অ্যানান্ডা লুইস তাঁর ছেলের মধ্যবিদ্যালয়ের স্নাতকতা পর্যন্ত বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলেনএবং তা রেখেছিলেন।

👉 আপনার প্রিয়জনদের স্ক্রিনিং করাতে উৎসাহিত করুন
👉 এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন
👉 জানতে চান স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের উপায়? মন্তব্য করুন নিচে