Home দিল্লি প্রেমিককে খুন, নিথর দেহে হলুদ-সিঁদুর!

প্রেমিককে খুন, নিথর দেহে হলুদ-সিঁদুর!

আঁচল ও সাক্ষম

শেষকৃত্যে বিয়ে সেরে বাবার মৃত্যুদণ্ড চাইলেন প্রেমিকা

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:জাতপাতের বেড়াজাল পেরিয়ে ভালোবাসার অপরাধে তরুণ প্রেমিককে নৃশংসভাবে খুন করল প্রেমিকার পরিবার। কিন্তু সেই বর্বরতাকে হার মানাল প্রেমিকার অমর ভালোবাসার প্রকাশ। মহারাষ্ট্রের নান্দেড়ে প্রেমিকের শেষকৃত্যে গিয়ে ২১ বছরের প্রেমিকা আঁচল মামিদওয়ার তাঁর নিথর দেহেই হলুদ মাখালেন, নিজের কপালে সিঁদুর পরলেন এবং প্রকাশ্যেই মৃত প্রেমিককে ‘বর’ হিসেবে গ্রহণ করে প্রতীকী বিয়ে সারলেন। একইসঙ্গে, খুনি বাবা-ভাইদের জন্য চাইলেন মৃত্যুদণ্ড।

বাস্তবের ‘সাইরাট’ কাহিনি

মারাঠি ছবি ‘সাইরাট’-এর করুণ পরিণতি যেন এবার বাস্তবের জমিতে নেমে এল। নিম্নবর্ণের যুবক সক্ষম তাতের (Sakksham Tate, ২৩) সঙ্গে উচ্চবর্ণের তরুণী আঁচলের তিন বছরের সম্পর্ক ছিল। সক্ষম, আঁচলের দাদাদের বন্ধু হওয়ার সুবাদে তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই আলাপই প্রেমে পরিণতি লাভ করে। কিন্তু এই ভিন্ন বর্ণের প্রেম জানার পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। আঁচলের পরিবার তাঁকে মারধর, শাসানি, হুমকি দিয়ে সম্পর্ক ভাঙার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু প্রতিবাদী আঁচল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি সক্ষমকেই বিয়ে করবেন। এই জেদের জেরেই আঁচেেলর পরিবার সক্ষমকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।

গুলি ও পাথরের আঘাতে নৃশংস খুন

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নান্দেড়ের পুরনো গঞ্জ এলাকায় সক্ষমকে ডেকে পাঠান আঁচলের বাবা গজানন মামিদওয়ার এবং দাদারা। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর তাঁর পাঁজরে গুলি করে এবং একটি বড় পাথর দিয়ে মুখ ও মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তরতাজা যুবক সক্ষমের। এই বর্বর হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে দেয়, আজও ভারতীয় সমাজ কবিগুরুর সেই প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারেনি— “কী জাত হবে যাবার কালে, সে কথা ভেবে বল না”। জাতপাতের গোঁড়ামির কাছে আরও একটি প্রাণ অকালে বলি হল।

মৃত্যুকে সাক্ষী রেখে প্রেমিকার ‘প্রতিবাদী বিয়ে’

পরের দিন, শুক্রবার সন্ধ্যায় সক্ষমের শেষকৃত্য চলছিল। শোকে পাথর আঁচল হঠাৎই সেখানে এসে হাজির হন। সেখানে তিনি শোক নয়, প্রতিবাদের এক বিরল দৃশ্য তৈরি করেন। সকলের সামনে তিনি প্রেমিকের নিথর দেহে হলুদ মাখিয়ে দেন। এরপর নিজেই নিজের সিঁথিতে সিঁদুর পরেন এবং ঘোষণা করেন— “আমি আজ থেকে এই পরিবারের বউ। সক্ষমের সঙ্গে আমার এই বিয়ে আমাদের প্রেমকে অমর করে রাখবে।”

সাংবাদিকদের সামনে আঁচল আরও বলেন, “সক্ষম মারা গেলেও আমাদের ভালবাসা জিতে গিয়েছে। হেরে গিয়েছে আমার বাবা এবং দাদারা। ওরা ঠান্ডা মাথায় ওকে মেরে ফেলেছে। যারা আমার প্রেমিককে খুন করেছে, আমার সেই বাবা এবং ভাইদের আমি মৃত্যুদণ্ড চাই।” একইসঙ্গে তিনি পণ করেন যে, তিনি সারাজীবন সক্ষমের স্ত্রী হিসেবে তাঁর শ্বশুরবাড়িতেই থাকবেন।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরপরই পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে। ইতিমধ্যে মূল অভিযুক্ত বাবা গজানন মামিদওয়ার, ছেলে হিমেশ, সাহিল সহ মোট ছয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে আঁচলের এই মর্মান্তিক এবং সাহসী পদক্ষেপ সমাজে জাতপাত ও অনার কিলিং-এর বিরুদ্ধে এক কঠিন বার্তা দিয়ে গেল।