Home Third Lead ভেদরগঞ্জে রাতের আঁধারে ‘রাজনীতি’: ঝটিকা মিছিল, পোস্টার আর উত্তেজনার অন্তরালে কী?

ভেদরগঞ্জে রাতের আঁধারে ‘রাজনীতি’: ঝটিকা মিছিল, পোস্টার আর উত্তেজনার অন্তরালে কী?

বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: এক রাতের ঝটিকা মিছিল, কিছু পোস্টার আর একটি ফেসবুক লাইভ-এই তিন উপকরণে ফের রাজনৈতিক আগুন জ্বলেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাত ১১টা। বেশিরভাগ মানুষ তখন দিনের ক্লান্তি শেষে বিশ্রামে। এমন সময় হঠাৎ ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা এলাকায় কিছু মুখোশধারী লোকের ঝটিকা মিছিল চোখে পড়ে। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মিছিলের ভিডিও। চরম উত্তেজনায় জর্জরিত হয় এলাকা। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার বিএনপির মিছিল, আর শনিবার প্রতিবাদ সমাবেশ—সব মিলিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ।

প্রাথমিকভাবে স্থানীয় থানা পুলিশ এবং একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মিছিলটি করেছে সখিপুর থানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছিল মুখোশে ঢাকা এবং কারও পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।

তবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর একটি মূল ফেসবুক লাইভ আসে “মনির হোসেন” নামের একটি আইডি থেকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মনির হোসেন সখিপুর দক্ষিণ তারাবনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তার নেতৃত্বে মিছিলের সংগঠন, পোস্টার লাগানো এবং ভিডিও ধারণ হয় বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

এই মিছিল ছিল একধরনের ‘পাওয়ার শো’। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর শরীয়তপুরের মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি কার্যত নিশ্চল ছিল। আওয়ামী লীগের কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল না। তাই হঠাৎ রাতের অন্ধকারে এমন ঝটিকা মিছিল রাজনৈতিক মহলে নতুন প্রশ্ন তোলে।
স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, এটি ছিল ক্ষমতা প্রদর্শনের কৌশলী বার্তা। কিন্তু কেন এই সময়ে?

ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পরদিন শুক্রবার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে পাল্টা মিছিল করে। তারা এই মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়। শনিবার সখিপুর স্কুলমাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকার পতনের পর যখন ক্ষমতার ভারসাম্য বদলেছে, তখন হঠাৎ এমন মিছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উসকানিমূলক।”

সখিপুর থানার ওসি ওবায়েদুল হক বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, মিছিলটি শরীয়তপুর ও চাঁদপুর সীমানা ঘেঁষা এলাকায় হয়েছে। সখিপুর থানার কেউ জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করা হবে।”
এ পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫টি বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালালেও কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই ঘটনার মূল বিস্ফোরণ ঘটেছে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। একাধিক আইডি থেকে ভিডিও সম্প্রচারিত হয়, যা পরদিন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক প্রচার-প্রপাগান্ডার এই ডিজিটাল কৌশল এখন মাঠের চেয়ে ভার্চুয়াল ময়দানেই বেশি কার্যকর হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন আচমকা রাজনৈতিক মিছিল ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া নতুন করে সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরব।