Home Third Lead এশিয়ার আকাশে চুরির আতঙ্ক: সংগঠিত চক্রের কবলে যাত্রীরা

এশিয়ার আকাশে চুরির আতঙ্ক: সংগঠিত চক্রের কবলে যাত্রীরা

  এভিয়েশন ডেস্ক: এশিয়ার আকাশপথে ভ্রমণ এখন আর আগের মতো নিরাপদ নয়। ২০২৪ সালে বিমানে চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যা যাত্রীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। হংকং, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার মতো ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে এক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত অপরাধচক্র।

হংকং: চুরির ঘটনায় ৭৫% বৃদ্ধি, খোয়া গেছে লক্ষ লক্ষ ডলার

হংকং সিকিউরিটি ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসে হংকংগামী বিভিন্ন ফ্লাইটে ১৬৯টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে যাত্রীদের মোট ৪.৩২ মিলিয়ন হংকং ডলার (প্রায় ২.৩৪ মিলিয়ন মালয়েশীয় রিঙ্গিত) মূল্যের জিনিসপত্র খোয়া গেছে। এই সংখ্যাটি কেবল ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৫% বেশি নয়, বরং তা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের পর্যটন-সমৃদ্ধ বছরগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।

নিরাপত্তা প্রধান ক্রিস ট্যাং জানিয়েছেন, বেশিরভাগ চুরির ঘটনা ঘটেছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত ও ভিয়েতনামের মতো স্বল্প-দূরত্বের ফ্লাইটগুলোতে। তার মতে, যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বেশি বেশি অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক চাপও এই ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।

সিঙ্গাপুর: সংগঠিত অপরাধের ছায়া

সিঙ্গাপুরেও বিমানে চুরির ঘটনা বাড়ছে, এবং এর পেছনে সংগঠিত চক্রের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারজনকে বিমানে চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক। তারা মূলত স্বল্প-দূরত্বের ট্রানজিট ফ্লাইটে যাত্রীদের ব্যাগ থেকে ক্রেডিট কার্ড ও নগদ অর্থ চুরি করে দ্রুত অন্য কোনো দেশে পালিয়ে যায়।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায়, ঝাং কুন (৫১) নামের এক ব্যক্তিকে কুয়ালালামপুর থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি স্কুট ফ্লাইটে যাত্রীর ব্যাগ থেকে ক্রেডিট কার্ড, ২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার এবং ১০০ মালয়েশীয় রিঙ্গিত চুরির অভিযোগে চাঙ্গি বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মালয়েশিয়া: কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ২৬৭টি অভিযোগ, তদন্তে ধীরগতি

মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর পুলিশ জানিয়েছে, ২০২২ সাল থেকে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (KLIA) ২৬৭টি চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪৬টিই ঘটেছে ২০২৪ সালে। তবে মাত্র ২৬টি ঘটনায় তদন্ত শুরু করা সম্ভব হয়েছে। এর কারণ হিসেবে পুলিশ বলছে, অনেক যাত্রীই নিশ্চিত নন যে ঠিক কখন বা কোথায় তাদের জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। আবার অনেকে অভিযোগ দায়ের না করেই তাদের গন্তব্যে চলে যান, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তোলে।

পুলিশের মতে, এই চুরির ঘটনাগুলোর সাথে একক অপরাধীর পাশাপাশি ২ থেকে ৪ জনের ছোট ছোট দলও জড়িত থাকতে পারে। তারা মূলত ফ্লাইটের সময় আলো কমে গেলে বা যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়লে সেই সুযোগটি নেয়। তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে যাত্রীদের ক্রেডিট কার্ড, নগদ অর্থ, গহনা এবং মোবাইল ফোন।

যাত্রীদের জন্য সতর্কতা

এই crescente প্রবণতার মুখে যাত্রীদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে:

  • সবসময় ব্যাগে তালা ব্যবহার করুন এবং সেটি নিজের চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করুন।
  • মূল্যবান জিনিসপত্র, যেমন গহনা, নগদ অর্থ বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ওভারহেড কম্পার্টমেন্টে না রেখে নিজের কাছে রাখুন।
  • বিমানে কোনো যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে কেবিন ক্রুকে জানান।

আকাশপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোকেও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। একইসাথে, যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত জরুরি, যাতে আকাশপথে ভ্রমণ снова নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।