বিজেনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। অপর তিন আসামি জাহেদা বেগম, সজিব শেখ ও রাতুল শেখ খালাস পেয়েছেন। আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণজুড়ে আবেগে ভেসে পড়ে আছিয়ার পরিবার ও স্থানীয় মানুষ।
শনিবার ১৭ মে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। বিচার শুরুর মাত্র ২১ দিনের মাথায় মামলার সকল কার্যক্রম শেষ হয়।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া ৬ মার্চ বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। এরপর গুরুতর অবস্থায় মাগুরা থেকে ফরিদপুর, তারপর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায় সে।
ঘটনার দুদিন পর ৮ মার্চ আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার চারজনের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় ১৩ এপ্রিল, চার্জ গঠন হয় ২৩ এপ্রিল, এবং ২৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত চলে সাক্ষ্যগ্রহণ।
মূল অভিযুক্ত হিটু শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও বিচার চলাকালে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদকর্মীদের সামনে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এ রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর আদালত চত্বরে উপস্থিত মানুষজন স্বস্তি প্রকাশ করেন।
রায়ের পর আদালত ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন,
“আমার মেয়ে তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু বিচার পেয়েছি, এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে যাঁরা তাকে সাহায্য করেছে, তাদের খালাস মেনে নিতে পারছি না।”
স্থানীয় এক তরুণ, কলেজপড়ুয়া মিরাজ হোসেন বলেন,
“এই রায় মানুষকে একটু হলেও আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু যারা সহযোগিতা করল, তাদের ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। সমাজে এমন অপরাধীরা আবারও মাথাচাড়া দিতে পারে।”
শহরের শিক্ষার্থী সংগঠন আলোর সন্ধান এর নেত্রী শিউলি পারভীন বলেন,
“আমরা প্রথম দিন থেকেই আন্দোলন করেছি। আছিয়ার বিচার শুধু এক শিশুর জন্য নয়, এটা ছিল নারীর নিরাপত্তার জন্য একটি প্রতীক। এই রায় দৃষ্টান্ত হোক।”
স্থানীয় আইনজীবী হাফিজুর রহমান বলেন,
“২১ দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি দেখিয়ে দিল, যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে দ্রুত বিচার সম্ভব। কিন্তু খালাসপ্রাপ্তদের ব্যাপারে রিভিউ চাওয়া উচিত।”
ঘটনার পর মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে। থানা ঘেরাও, আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ হয়। অনেক আইনজীবী ঘোষণা দেন, আসামিপক্ষকে তাঁরা কোনো আইনগত সহায়তা দেবেন না।
সরকারও মামলাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অবশেষে মাত্র ২ মাস ১১ দিনের মধ্যে তদন্ত, চার্জ গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণ ও রায় সম্পন্ন করে আদালত এই মামলায় একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। রায় হয়তো আছিয়াকে ফেরাতে পারবে না, কিন্তু তার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকেরা।