Home আন্তর্জাতিক আজারবাইজান: ইসলামিক ঐতিহ্য ও ইউরোপীয় প্রভাবের সহাবস্থান

আজারবাইজান: ইসলামিক ঐতিহ্য ও ইউরোপীয় প্রভাবের সহাবস্থান

সংগৃহীত ছবি
দেশ পরিচিতি: আজারবাইজান

আজারবাইজান দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যা ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর উত্তরে রাশিয়া, পশ্চিমে জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া, দক্ষিণে ইরান এবং পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর অবস্থিত। রাজধানী বাকু, যা কাস্পিয়ান সাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত এবং দেশটির অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন:
আজারবাইজানের মোট আয়তন প্রায় ৮৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার। দেশটি পর্বতময়, তবে কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী এলাকাগুলো তুলনামূলকভাবে সমতল। ককেশাস পর্বতমালা দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। জলবায়ু প্রধানত উপ-ক্রান্তীয়, গ্রীষ্মে উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতে তুলনামূলক ঠান্ডা।

জনসংখ্যা ও ভাষা:
আজারবাইজানের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি (১০ মিলিয়ন)। জনগণের বেশিরভাগই আজারী বা আজারবাইজানি তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর। সরকারি ভাষা আজারবাইজানি (আজারী), যা তুর্কি ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। ইসলাম প্রধান ধর্ম; প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ মুসলিম, তাদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি।

রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থা:
আজারবাইজান একটি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র, যেখানে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান, এবং বর্তমানে (২০২5 পর্যন্ত) প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ দেশ পরিচালনা করছেন। রাজধানী বাকুতে সংসদ ভবন ও প্রশাসনিক দপ্তরগুলো অবস্থিত।

অর্থনীতি:
আজারবাইজানের অর্থনীতি প্রধানত তেল ও গ্যাস নির্ভর। দেশটি কাস্পিয়ান সাগরের তলদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে থাকে। “বাকু-তিবিলিসি-সেইহান” পাইপলাইন ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। তাছাড়া কৃষি, বস্ত্র, রাসায়নিক ও পর্যটন খাতও ক্রমশ উন্নতি করছে।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:
আজারবাইজানের সংস্কৃতিতে তুর্কি, পারস্য ও রুশ ঐতিহ্যের মিশ্র প্রভাব রয়েছে। সংগীত, নৃত্য, সাহিত্য ও কারুশিল্পে দেশটির নিজস্ব ধারা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী “মুগাম” সংগীত ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। নবরোজ উৎসব আজারবাইজানের অন্যতম প্রধান উৎসব।

পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান:
রাজধানী বাকু আধুনিক স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের সমাহার—বিশেষ করে “ফ্লেম টাওয়ারস”, “ওল্ড সিটি (ইচেরিশেহের)” ও “মেইডেন টাওয়ার”। এছাড়া গবুস্তান জাতীয় উদ্যানের প্রাগৈতিহাসিক শিলালিপি, নাখিচেভান প্রদেশ, এবং কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী রিসোর্ট এলাকাগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

জাতিসংঘ সদস্যপদ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
আজারবাইজান ১৯৯২ সালে জাতিসংঘে যোগ দেয়। দেশটি ইউরোপীয় কাউন্সিল, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC), এবং নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্টের সদস্য। প্রতিবেশী আর্মেনিয়ার সঙ্গে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ বিদ্যমান, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

  • আয়তন: ৮৬,৬০০ বর্গকিমি
  • জনসংখ্যা: প্রায় ১০ মিলিয়ন
  • রাজধানী: বাকু
  • সরকার ব্যবস্থা: প্রজাতন্ত্র
  • ভাষা: আজারবাইজানি
  • মুদ্রা: মানাত (AZN)
  • ধর্ম: ইসলাম (প্রধানত শিয়া)