বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দীর্ঘ আলোচনার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে। ফলে আগামী জুন মাসের মধ্যেই ঋণের দুটি কিস্তি বাবদ ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ-এর দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজের আওতায় ইতোপূর্বে তিনটি কিস্তিতে ১৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ কিস্তি শর্ত বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণে ছাড়েনি আইএমএফ। কয়েক ধাপে বৈঠক হলেও সমঝোতা না হওয়ায় ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত থাকছিল। অবশেষে মে মাসে অনুষ্ঠিত অনলাইন বৈঠকে কিছুটা অগ্রগতি হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সমঝোতার অংশ হিসেবে সরকার দুটি বড় শর্তে আংশিক সাড়া দিয়েছে। প্রথমত, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আনা হবে। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আদায় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার আনা হয়েছে।
বর্তমানে প্রচলিত ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্য দর ১১৯ টাকা। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ ওঠানামা করে সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় ১২২ টাকা। এখন এই ওঠানামার সীমা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা ৭৬ পয়সা পর্যন্ত উঠতে পারবে, আর সর্বনিম্ন হতে পারে ১১৪ টাকা ২৪ পয়সা। তবে বাজারে ডলারের দাম সাধারণত বাড়ে, কমে না—এমন বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার মূল্যবৃদ্ধি সীমিত রাখবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রাজস্ব খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআরকে ভেঙে দুটি আলাদা সংস্থা গঠন করা হয়েছে। একটি কর নীতি প্রণয়ন করবে, অপরটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে এই কাঠামো সংস্কার করা হয়। আইএমএফ-এর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল এনবিআরের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “এই ঋণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বার্তা দিতে প্রয়োজন। আইএমএফ অর্থনীতি পর্যালোচনা করেই ঋণ দেয়, তাই এটি একটি ইতিবাচক বার্তা দেয় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের।”
আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অনলাইনে যুক্ত হবেন। সেখানে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফ-এর সঙ্গে সমঝোতা ও কিস্তি ছাড়ের ঘোষণা দেশের অর্থনৈতিক খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি টাকার মান নিয়ে অনিশ্চয়তা কিছুটা হলেও কমবে।