Home First Lead আবাসনে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে, মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ভাঙছে

আবাসনে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে, মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ভাঙছে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: অবিরাম মূল্যবৃদ্ধি, পরিকল্পনাগত জটিলতা ও অস্বস্তিকর নীতিগত পরিবেশের কারণে একাধিক বছর ধরে স্থবির হয়ে পড়া দেশের আবাসন খাত নতুন করে গভীর সংকটে পড়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে রড-সিমেন্টসহ প্রধান উপকরণে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন আবাসন সংশ্লিষ্টরা। বাড়তি কর ও ভ্যাটের কারণে ফ্ল্যাট-মালিক হওয়ার স্বপ্ন আরও দূরে সরে যাচ্ছে সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগাল থেকে।

নির্মাণ খাতের অন্যতম সংগঠন রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে নির্মাণ খাতের সব পর্যায়ে নতুন নতুন কর ও কর বৃদ্ধির ধারা বাস্তবে আবাসন খাতকে আরও দুর্বল করে দেবে। বিশেষ করে রড ও সিমেন্ট উৎপাদনে বাড়তি শুল্ক-কর ভবনের নির্মাণ ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবে।

তথ্য অনুযায়ী, রড উৎপাদনের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ থেকে বিলেট তৈরিতে ভ্যাট ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। সিমেন্টের প্রধান উপাদান ক্লিঙ্কারের আমদানিতে আগের নির্দিষ্ট হারে শুল্ক না রেখে এখন টনের মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে সিমেন্ট শিট তৈরিতে ভ্যাট তিনগুণ করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘‘এই কর বৃদ্ধির ফলে নির্মাণ ব্যয় বহুগুণ বাড়বে। অথচ মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য আগেই হারিয়েছে। এখন তারা একেবারে বাজার থেকে ছিটকে যাবে।’’

অন্যদিকে, কালো টাকার বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও সেখানেও করের হার বাড়ানো হয়েছে পাঁচগুণ পর্যন্ত। উদাহরণস্বরূপ, গুলশানে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটে অপ্রদর্শিত অর্থে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগের কর ছিল ১৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ লাখ টাকায়। এই কর বৃদ্ধিকে সম্পূর্ণভাবে ‘বিনিয়োগ নিরুৎসাহিতকারী’ বলে আখ্যায়িত করেছে রিহ্যাব।

নতুন বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচায় রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে, এখন তা যেকোনো মূল্যের সম্পত্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এতে আয়কর রিটার্ন না থাকলে কেউ আর জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন না।

প্রস্তাবিত বাজেটে জমির নিবন্ধন খরচ কিছুটা কমানোর উদ্যোগ থাকলেও একইসঙ্গে মৌজা মূল্য বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে মোট ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। এ কারণে জমি মালিক ও নির্মাণ কোম্পানিগুলো নকশা অনুমোদন ও ভবন নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ বা ধীর করে দিয়েছে। এতে আবাসন খাতের সঙ্গে জড়িত সিমেন্ট, রড, ইলেকট্রিক সামগ্রী, আসবাব, স্যানিটারি সামগ্রী, রঙ, অ্যালুমিনিয়ামসহ অসংখ্য শিল্পে উৎপাদন কমেছে এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে।

রিহ্যাব সহ-সভাপতি এমএ আউয়াল বলেন, ‘‘আবাসন খাত অর্থনীতিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখে। অথচ এই খাতকে ঘিরে এবার কোনো ইতিবাচক প্রণোদনা না দিয়ে কর-ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এতে ক্রেতা যেমন কমবে, নির্মাণকারীরাও ঝুঁকিতে পড়বে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই গণমাধ্যমের সামনে এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরব।’’