বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ঢাকার শহরতলি কিংবা প্রধান নগরগুলোর আশপাশে অনেকেই স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে পান স্বল্পমূল্যের ব্যক্তিমালিকানাধীন ফ্ল্যাটে। বড় বড় আবাসন কোম্পানির তুলনায় তুলনামূলক সস্তায় এইসব ফ্ল্যাটে থাকা যায়, যা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই পড়ে। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে গিয়ে অনেকেই পড়ে যান প্রতারণা, আইনি জটিলতা ও নির্মাণ-ত্রুটির ফাঁদে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ব্যক্তিমালিকানায় নির্মিত ফ্ল্যাট কেনার আগে ন্যূনতম সাতটি বিষয়ে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে অর্থ, শান্তি এবং নিরাপত্তা—তিনটিই হারানোর আশঙ্কা থাকে।
১. বৈধ দলিলপত্র না থাকা
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নির্মাণকারী ব্যক্তি নিজেই জমির মালিক না হয়ে কোনো অংশীদার বা ওয়ারিশান। ফলে প্রকৃত মালিকানা যাচাই না করে ফ্ল্যাট কিনলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় পড়তে হয়।
২. ভবনের অনুমোদন নেই
রাজউক, সিডিএ কিংবা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলা হয় অসংখ্য ভবন। অনুমোদনহীন ভবনে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করলে হঠাৎ করেই ভবন ভেঙে ফেলার নোটিশ আসতে পারে।
৩. নির্মাণ মানে ত্রুটি
ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত ফ্ল্যাটে অধিকাংশ সময় প্রকৌশল নির্দেশনা মানা হয় না। রড, সিমেন্ট কিংবা কাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে থাকে প্রশ্ন। ভূমিকম্প সহনশীলতা কিংবা পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থাও হয় দায়সারা।
৪. ফায়ার সেফটি বা বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ঘাটতি
ছোট ফ্ল্যাট প্রকল্পে সাধারণত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বা নির্ভরযোগ্য বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকে না। একাধিক ইউনিটে এক মিটার কিংবা অবৈধ সংযোগও দেখা যায়, যা বিপজ্জনক।
৫. ভবিষ্যতে রেজিস্ট্রি জটিলতা
অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সময় কেবল চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে থাকেন, কিন্তু তা বৈধ দলিল নয়। ফলে পরবর্তীতে রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়।
৬. পার্কিং ও খোলা জায়গার সংকট
পার্কিং, ছাদ বা সিঁড়িঘরের মালিকানা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলে বাসিন্দাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এতে ফ্ল্যাট মালিকদের মধ্যে দূরত্ব ও অসন্তোষ তৈরি হয়।
৭. মূল মালিক বাড়িতে থাকলে জটিলতা বাড়ে
ব্যক্তি মালিকানায় নির্মিত বাড়িতে যদি মূল মালিক নিজেও থাকেন, তবে পরিস্থিতি অনেক সময় ভাড়া বাড়ির মতো হয়ে পড়ে। সিদ্ধান্ত, কেয়ারটেকার নিয়ন্ত্রণ বা বাড়ির ব্যবহার—সবকিছুতেই থাকে মূল মালিকের ছায়া। দারোয়ান বা নিরাপত্তাকর্মীকে সবাই মিলে বেতন দিলেও দেখা যায়, তিনি শুধু মূল মালিকের নির্দেশেই চলে। এমনকি বিক্রি করার পরও মূল মালিক তাঁর একক অধিকারচর্চা করতে থাকেন, যা অন্য ফ্ল্যাটমালিকদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
প্রকৌশলী ও আবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তি বা স্বল্প পরিসরের প্রকল্প থেকে ফ্ল্যাট কেনার আগে জমির দলিল, ভূমির ব্যবহার ছাড়পত্র, নকশা অনুমোদন এবং নির্মাণগত সনদপত্র যাচাই করে নিতে হবে। সঙ্গে আগাম রেজিস্ট্রি বা নোটারি করা অত্যন্ত জরুরি।
সতর্ক না থাকলে, স্বপ্নের ছাদ হতে পারে দুঃস্বপ্নের ঘর।
🏠 ফ্ল্যাট কিনবেন ভেবে ফেলেছেন? কাগজপত্র না বুঝে চুক্তি করলে স্বপ্নের ঘর হতে পারে দুঃস্বপ্নের ফাঁদ।
ফ্ল্যাট ক্রেতার গাইডলাইন ধারাবাহিকে জানুন একের পর এক সতর্কবার্তা ও করণীয়।
পড়তে থাকুন, জানুন, সাবধান থাকুন।