কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: ফ্ল্যাট কিনেছেন আবাসিক ভবনে। ভাবছিলেন নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করবেন, কিন্তু এক সকালে ঘুম ভাঙল নিচতলার রেঁস্তোরা, বুটিক, ফাস্টফুড বা বিউটি পার্লারের কোলাহলে! ফ্ল্যাট তো কিনেছিলেন থাকার জন্য, দোকানঘর নয়। অথচ ব্যক্তিমালিকানায় নির্মিত অনেক ভবনেই আজ এমন বাস্তবতা।
এই দ্বৈত রূপ—আবাসিকের ভেতরে বাণিজ্যিক—শুধু বিরক্তিকর নয়, অনেক সময় হয় আইন বহির্ভূত এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাড়ির নিচে দোকান? ঝুঁকি শুধু শব্দ নয়
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলে সেখানে ভিড় বেশি হয়, বাইরের মানুষের আনাগোনা বাড়ে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, পার্কিং জট বাড়ে এবং অনেক সময় ভবনের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারী যন্ত্রপাতি, রান্নার চুলা বা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে।
অবৈধ হলেও নিয়ম হয়ে গেছে?
রাজউক বা সিডিএ অনুমোদিত নকশায় ভবনের ব্যবহারের ধরন (Use Category) স্পষ্টভাবে লেখা থাকে—Residential বা Commercial। কিন্তু বাস্তবে অনেক ভবনেই নিচতলা বা একাংশকে ব্যবসার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। নির্মাতা বা মালিকেরা বলে থাকেন, “একটু পার্লার বা কোচিং থাকলে কী এমন হয়?” অথচ এটি ভবিষ্যতে জটিল আইনি দ্বন্দ্বের কারণ হতে পারে।
আইন কী বলে?
বাংলাদেশের শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে—আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাট বা ইউনিট বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না, যদি না প্রকল্পটি ‘মিশ্র ব্যবহার’ হিসেবে অনুমোদিত হয়। আবাসিক নকশায় বাণিজ্যিক ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। এমনকি কর্পোরেট অফিস খুললেও তা অনুমোদনভিত্তিক হতে হয়।
বিক্রেতার প্রতিশ্রুতি নয়, দলিল ও নকশা দেখুন
অনেক ক্রেতা বিক্রেতার মুখের কথা শুনে ফ্ল্যাট কেনেন—“এখানে শুধু ভদ্রলোকেরা থাকেন”, “এমন কিছু হবে না”—কিন্তু কেনার পরই অন্য মালিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে দেন। তখন মুখে বলা প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য থাকে না।
সমাধান: আগেই যাচাই করুন ভবনের শ্রেণি
১. নকশা ও প্ল্যান দেখে নিশ্চিত হোন ভবনটি শুধু আবাসিক কি না
২. রেজিস্ট্রির খসড়া পড়ে দেখুন, সেখানে “নন-কমার্শিয়াল ইউজ” উল্লেখ আছে কি না
৩. ফ্ল্যাট মালিকদের মধ্যে লিখিত সমঝোতা থাকলে তা সংরক্ষণ করুন
৪. প্রয়োজনে স্থানীয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট নিন
যেখানে শান্তি খুঁজবেন, সেখানে যদি শোরগোল জেঁকে বসে—তাহলে ভুলটা কার ছিল? জেনে নিন আগে, সিদ্ধান্ত নিন পরে।