Home স্বাস্থ্য ওজন কমানো থেকে মেডিটেশন: আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে সহজ উপায়

ওজন কমানো থেকে মেডিটেশন: আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে সহজ উপায়

হেলথ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রতি ছয় জনে একজন আর্থ্রাইটিসে (গেঁটেবাত) আক্রান্ত, যা সংখ্যা হিসেবে দাঁড়ায় ১ কোটি মানুষেরও বেশি। ‘ভার্সাস আর্থ্রাইটিস’-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ নীরবে ভোগেন জয়েন্টের ব্যথা, ফোলা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যায়। আর্থ্রাইটিসের কোনো স্থায়ী নিরাময় না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনধারায় কিছু সহজ পরিবর্তন উপসর্গ উপশমের পাশাপাশি রোগের অগ্রগতি ধীর করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধে সীমাবদ্ধতা, কিন্তু জীবনধারার প্রভাব ব্যাপক
নর্থ হ্যাম্পশায়ার হাসপাতালের পরামর্শক রিউমাটোলজিস্ট ড. ওয়েন্ডি হোল্ডেন বলেন, প্রচলিত ব্যথানাশক বা প্রদাহনাশক ওষুধ সবসময় কার্যকর হয় না এবং অনেকের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু জীবনধারা পরিবর্তন রোগ নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

সবচেয়ে প্রচলিত দুই ধরনের আর্থ্রাইটিস হলো—

অস্টিওআর্থ্রাইটিস (OA): বয়সজনিত বা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে জয়েন্ট ক্ষয়, সাধারণত হাত, মেরুদণ্ড, হাঁটু ও কোমরে প্রভাব ফেলে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA): অটোইমিউন রোগ, যেখানে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত জয়েন্টের আস্তরণে আক্রমণ চালায়।

ড. হোল্ডেন জানান, ধরন যাই হোক, জীবনধারার বেশিরভাগ পরামর্শই সব ধরনের আর্থ্রাইটিসে প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক উপায়ে আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণের ১০ উপায়

১. ওজন কমানো — মাত্র ৫-১০% ওজন কমালেই হাঁটু, কোমর ও অন্যান্য জয়েন্টের ওপর চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে, ব্যথা হ্রাস পায়।
২. ধূমপান ত্যাগ — ধূমপান প্রদাহ বাড়ায়, জয়েন্টের রক্তসঞ্চালন কমায় ও কার্টিলেজ ক্ষয় ত্বরান্বিত করে।
৩. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ডায়েট — মাছ, অলিভ অয়েল, শাকসবজি, ডাল, পূর্ণ শস্য এবং বেরিজাতীয় ফল প্রদাহ কমায়; প্রসেসড ও অতিরিক্ত চিনি-সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম — পেশি ও জয়েন্ট শক্তিশালী করে ব্যথা ৩০% পর্যন্ত কমাতে পারে। হাঁটা, সাঁতার বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যায়াম উপকারী।
৫. আকুপাংচার — ব্যথা ও প্রদাহ কমিয়ে চলাফেরার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
৬. ম্যাসাজ থেরাপি — টান ও ব্যথা কমায়, রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
৭. হিট ও কোল্ড থেরাপি — গরম থেরাপি পেশি শিথিল করে, ঠান্ডা প্রদাহ ও ফোলা কমায়।
৮. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট — মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম ব্যথা সহনশীলতা বাড়ায়।
৯. গুণগত মানসম্পন্ন ঘুম — ভালো ঘুম প্রদাহ কমিয়ে সুস্থতায় সহায়তা করে।
১০. সাপ্লিমেন্ট — ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, রোজহিপ, আদা, হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন ইত্যাদি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে উপশম দিতে পারে, তবে ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি হলো দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা। এতে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জীবনমানও উন্নত হয়।