Home কৃষি  ‘আলু উৎসব-২০২৫’: উৎপাদন, রপ্তানি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের খোঁজ

 ‘আলু উৎসব-২০২৫’: উৎপাদন, রপ্তানি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের খোঁজ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ভাতের পরেই বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় যার অবস্থান, সেই আলুকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বসছে এক ভিন্নধর্মী আয়োজন। আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘আলু উৎসব-২০২৫’। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কেবল প্রদর্শনী নয়, দেশের অন্যতম প্রধান এই কৃষিপণ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানি বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ক্ষেত্র হয়ে উঠবে এই উৎসব।

উৎসবের লক্ষ্য ও আয়োজন
আয়োজকরা জানান, আলুর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিই এই উৎসবের মূল লক্ষ্য। উৎসবে বিভিন্ন স্টলে আলুর তৈরি নানা পদের খাবারের পাশাপাশি প্রদর্শিত হবে উন্নত জাতের আলু। এছাড়া থাকবে সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক, যেখানে কৃষক, ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক এবং নীতি-নির্ধারকরা অংশ নেবেন।

আলু উৎপাদন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
বিশ্বে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন ছাড়িয়ে যাচ্ছে ১ কোটি টনের ঘর। উদ্বৃত্ত উৎপাদন থাকার পরও প্রায়শই সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, আবার কখনো ভোক্তাদের চড়া দামে আলু কিনতে হয়। উৎসবের আলোচনায় এই উৎপাদন ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতা দূর করার উপায় খোঁজা হবে।

সংরক্ষণ ও হিমাগার সংকট
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০টির মতো হিমাগার রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় এই সংরক্ষণ ক্ষমতা অপর্যাপ্ত। ফলে প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা পানির দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন এবং মৌসুম শেষে অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।

সংগঠনটির নেতাদের মতে, আধুনিক হিমাগার স্থাপন এবং বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ কমানো না গেলে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। উৎসবে এই সংকট নিরসনের দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

মূল্য পরিস্থিতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ
সাম্প্রতিক সময়ে আলুর বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। খুচরা বাজারে আলুর দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ‘আলু উৎসব-২০২৫’-এ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বা সরবরাহ ব্যবস্থা কীভাবে আরও দক্ষ করা যায়, তা নিয়ে বিশেষ সেশন থাকবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কীভাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে হিমাগার হয়ে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে রূপরেখা দেওয়া হতে পারে।

রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সম্ভাবনা
আলু এখন আর কেবল তরকারি হিসেবেই সীমাবদ্ধ নেই। চিপস, স্টার্চ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ নানা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে এর ব্যবহার বাড়ছে। রাশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের আলুর চাহিদা রয়েছে। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস’ (GAP) বা উত্তম কৃষি চর্চার অভাব একটি বড় বাধা। উৎসবে রপ্তানিকারকরা নিরাপদ আলু উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়ে কৃষকদের দিকনির্দেশনা দেবেন।

আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই উৎসব। আশা করা হচ্ছে, এই আয়োজন দেশের কৃষি অর্থনীতিতে আলুর গুরুত্ব নতুন করে তুলে ধরবে।