Home কৃষি ৫৫ হাজার টন আলু পড়ে আছে দেবীগঞ্জের হিমাগারে

৫৫ হাজার টন আলু পড়ে আছে দেবীগঞ্জের হিমাগারে

ছবি এ আই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিমাগারে সংরক্ষিত প্রায় ৯ লাখ বস্তা (৫৫ হাজার মেট্রিক টন) আলু চাষীদের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে আলুর দাম মাত্র ৯ টাকা কেজি, অথচ হিমাগারে সংরক্ষণের খরচ প্রতি কেজি ২–৫ টাকা। তাই চাষীরা আলু নিতে অনিচ্ছুক, আর এতে বিপাকে পড়েছেন কোল্ড স্টোরেজ মালিকরাও।

 কোল্ড স্টোরেজ ঘুরে জানা গেছে, দেবীগঞ্জের ৫টি হিমাগারে এ বছর প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। চাষীরা জানান, উৎপাদন ও সংরক্ষণ খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর খরচ ৩১–৩৪ টাকা, কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯ টাকায়। এতে চাষীদের সম্ভাব্য ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা।

মো. আইবুল হক, একজন আলুচাষী, বলেন, “৬ হাজার ২০০ বস্তা আলু রেখেছি। উৎপাদন ও সংরক্ষণ খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ ২৯ টাকা। এখন আলু বিক্রি করলে কেবল স্টোরের ভাড়া মেটানো যায়। এই অবস্থায় আমার প্রায় ৭০ লাখ টাকার লোকসানের ঝুঁকি রয়েছে।”
অন্য চাষী মো. নাঈমুল ইসলাম জানান, “আমার ৩ হাজার বস্তা আলু এখনো স্টোরে আছে। প্রতি কেজিতে লোকসান ২৫ টাকারও বেশি।”

স্টোর মালিকদের দুশ্চিন্তা:
মুয়াজ অ্যান্ড মাহি কোল্ড স্টোরেজের মালিক আবুল বাশার খান জানান, “১ লাখ ৮০ হাজার বস্তার মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার আলু বের হয়েছে। বাকি আলু না তুললে আমাদের প্রায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতি হবে।”
মদিনা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “২ লাখ ৮ হাজার বস্তার মধ্যে বের হয়েছে ৬৫ হাজার। আলু না তুলায় বিদ্যুৎ বিল বেড়ে গেছে, প্রতি মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। অন্যান্য বছর এই সময়ে বিদ্যুৎ বিল অর্ধেকও হয়নি। এ অবস্থায় আনুমানিক ৬ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”

অন্যান্য কোল্ড স্টোরেজে আলু তোলার হার:

  • ফ্রেন্ডস কোল্ড স্টোরেজ: ১ লাখ ২৫ হাজার বস্তার মধ্যে ৪২ হাজার
  • এসবি-১ স্টোর: ২ লাখ ২৪ হাজারের মধ্যে ৭১ হাজার
  • এসবি-২ স্টোর: ১ লাখ ৭০ হাজারের মধ্যে ৭০ হাজার বস্তা

হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। এরপর অতিরিক্ত সংরক্ষণ সম্ভব হবে না।

কৃষি কর্মকর্তাদের মন্তব্য:
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈম মোর্শেদ বলেন, “লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি উৎপাদন হওয়ায় আলুর চাহিদা কম। গত মৌসুমে লক্ষ্য ছিল ৫৭১০ হেক্টর, কিন্তু ৬৯৬০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। ফলে সরবরাহ বেড়ে দাম কমেছে।”
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, “আমরা সবসময় লাভজনক ফসল চাষে উৎসাহিত করি। কিন্তু কৃষকরা আমাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে অতিরিক্ত আবাদে ঝুঁকি নিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে, সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। সরকার যদি ভর্তুকি মূল্যে আলু সংগ্রহ করে বিক্রি করত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসত।”

দেবীগঞ্জে আলু উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বাজারে দাম কম। চাষীরা সংরক্ষিত আলু নিতে অনিচ্ছুক, হিমাগার মালিকরা অতিরিক্ত খরচ ও বিদ্যুৎ বিলের বোঝা বহন করছেন। দীর্ঘমেয়াদে এ পরিস্থিতি কৃষক ও স্টোর মালিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।