তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: ভাদ্রের পাঠ চুকিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন আশ্বিন-কার্তিক, শরৎকালের স্নিগ্ধ ছোঁয়া প্রত্যাশিত। অথচ প্রকৃতির পটে এ যেন এক ভিন্ন চিত্র। শরতের নীলিমায় তুলোর মতো মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ানোর কথা যেখানে, সেখানে এখনো বর্ষার গুরুগম্ভীর মেঘে ঢাকা আকাশ, কোথাও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, আবার কোথাও বজ্রসহ আকস্মিক ধারাপাত। বৃষ্টি না থাকলে ভ্যাপসা গরমে অস্থির জনজীবন, আর্দ্রতার ভারে বাতাস ভারী। আবহাওয়ার এই অচেনা আচরণ যেন ঋতুবৈচিত্র্যের চিরাচরিত সুরকে ছাপিয়ে এক নতুন ছন্দে বাজছে।
সাধারণত, বছরের এই সময়ে প্রকৃতি প্রস্তুতি নেয় শীতের আগমনের জন্য, হিমেল পরশ জানান দেয় আসন্ন হেমন্তের। কিন্তু এবার সেই আভাস মেলেনি কোথাও; বরং অক্টোবরের উষ্ণতা আর আর্দ্রতা প্রশ্ন তুলেছে আবহাওয়ার চিরচেনা নিয়ম নিয়ে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক এই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন, “বাংলা ঋতুচক্রে আশ্বিন-কার্তিক শরৎকাল, এরপর অগ্রহায়ণ-পৌষ হেমন্ত। এই সময়েই মূলত শীতের আগমন ঘটে। কিন্তু এ বছর মৌসুমি বায়ুর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে শরতের স্বাভাবিক শুষ্কতা এখনো অধরা।” তিনি আরও যোগ করেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেলেও দিনের উষ্ণতা অক্টোবর মাসজুড়েই অনুভূত হবে। তাঁর পূর্বাভাস অনুযায়ী, “১২ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে বিদায় নেবে।”
শীতের আগমনের প্রশ্নে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ইসলামের কণ্ঠেও একই সুর। তিনি স্পষ্ট জানান, “এখনো শীতের কোনো পূর্বাভাস নেই। বরং পুরো অক্টোবর মাস জুড়েই এই ভ্যাপসা গরমের দাপট অব্যাহত থাকতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া আর্দ্র ও অস্বস্তিকরই থাকবে। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে এবং তখনই ঠান্ডার প্রকৃত ছোঁয়া পাওয়া যাবে।” তিনি এও সতর্ক করেন যে, যেসব এলাকায় বর্তমানে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে, তা শীতের কুয়াশা নয়, বরং আর্দ্রতা ও মেঘের প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষণস্থায়ী কুয়াশা।
অক্টোবরের এমন ‘অচেনা’ আচরণের মূলে রয়েছে চলতি বছরের এলনিনো প্রভাব, যা মৌসুমি বৃষ্টির ধারাকে দীর্ঘায়িত করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। ফলে শরতের নিজস্ব নিয়ম ভেঙে বর্ষা তার প্রভাব টেনে নিয়ে গেছে অনেকটা দূরে। তাঁদের মতে, “এবার নভেম্বরের আগে ঠান্ডার কোনো ছোঁয়া পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”
অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সাধারণত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিত। কিন্তু এবার সেই বিদায় পর্ব যেন বিলম্বিত। আকাশে এখনো ভাসছে মেঘের পাল, বাতাসে আর্দ্রতার ভার, আর রোদে লুকিয়ে থাকা বৃষ্টির গন্ধ।
তবু আশাবাদীরা বলছেন—অক্টোবরের এই ভিন্নতা হয়তো এক নতুন বার্তা। হয়তো প্রকৃতি একটু ধীর হচ্ছে, একটু ভেবে নিচ্ছে, তারপর একদিন এক সকালেই জেগে উঠবে নরম রোদ, কুয়াশার চাদর, আর সেই চেনা শীতের ছোঁয়ায়।