Home আকাশ পথ একের পর এক দুর্ঘটনায় ভারতের আকাশপথ নিয়ে প্রশ্ন

একের পর এক দুর্ঘটনায় ভারতের আকাশপথ নিয়ে প্রশ্ন

সংগৃহীত ছবি
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ
এভিয়েশন ডেস্ক:

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার রেশ না কাটতেই প্রশ্ন উঠেছে ভারতের আকাশপথ ও হেলিকপ্টার চলাচল কি ক্রমশ অনিরাপদ হয়ে পড়ছে? বুধবার, ১২ জুন ভোরে গুজরাটের মেঘানি নগরের ওপর দিয়ে উড্ডয়নকালে ফ্লাইটটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভেঙে পড়ে। প্রাথমিক হিসাবে শতাধিক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতের অন্যতম বড় বিমান দুর্ঘটনা।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত এক বছরে ভারতের অন্তত পাঁচটি বড় হেলিকপ্টার ও বিমান দুর্ঘটনা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০২৫ সালের ৮ মে উত্তরাখণ্ডের গংগোত্রী এলাকায় চারধাম যাত্রার একটি হেলিকপ্টার খারাপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাঁচজন তীর্থযাত্রী ও একজন পাইলট নিহত হন। এই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন যাত্রীকে সংকটজনক অবস্থায় দিল্লির এমস হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এর আগে, ৫ জানুয়ারি গুজরাটের পোরবন্দরে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের ALH ধ্রুব হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে। তিনজন—দুই পাইলট ও এক টেকনিক্যাল কর্মী—প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর ধ্রুব মডেলের সব হেলিকপ্টার সাময়িকভাবে বন্ধ করে তদন্ত শুরু হয়। একইভাবে মার্চ ২০২৫-এ অরুণাচল প্রদেশের মিগিং এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ALH রুদ্র চপার ‘May Day’ সংকেত পাঠিয়ে নিখোঁজ হয় এবং পরে এর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হয়। এতে দুই পাইলটসহ পাঁচ সেনাসদস্যের মৃত্যু ঘটে।

২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট পুণের কাছে একটি প্রাইভেট হেলিকপ্টার ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। ক্যাপ্টেন আহত হলেও অন্য যাত্রীরা প্রাণে বেঁচে যান।

এমনকি অতীতেও, ২০২০ সালের ৭ আগস্ট এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ১৩৪৪ কোঝিকোড বিমানবন্দরে রানওয়ে ওভাররানের পর ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়ে। ১৯০ জন আরোহীর মধ্যে ২১ জন প্রাণ হারান এবং ১১০ জন গুরুতর আহত হন। ওই দুর্ঘটনার জন্য আবহাওয়া ও পাইলটের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হয়।

এই ধারাবাহিক দুর্ঘটনাগুলো দেখায়, ভারতের বিমান ও হেলিকপ্টার পরিবহন ব্যবস্থায় একাধিক দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি এলাকা, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন, ও প্রযুক্তিগত রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির কারণে এসব দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সংস্থার হেলিকপ্টারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন করে ফ্লিট রিভিউ ও ক্রু প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ উঠেছে।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কেবল একটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সতর্কবার্তা—যেখানে ভারতকে এখনই তার আকাশপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। নয়তো এমন দুর্ঘটনা সামনে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।