
দুপুর ১টা নাগাদ সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। উড়ানের পরই বিমানবন্দরের অদূরে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ২৪২ জন যাত্রী। বিমানটি লোকালয়ে ভেঙে পড়ার কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছু ক্ষণ পরেই বিমানের লেজের অংশটি নীচের দিকে নামতে নামতে হঠাৎ মাটিতে ভেঙে পড়ে।

বিমানটি বোয়িং সংস্থার বি৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান ছিল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি অহমদাবাদের টার্মিনাল ২ থেকে ছেড়েছিল। ৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের উড়ান শেষে সেটির নামার কথা ছিল লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে। এই ধরনের একটি বিমানে সর্বোচ্চ ২৯০ থেকে ৩০০ জন যাত্রী থাকতে পারেন বলে।

লোকালয়ের মধ্যে বিমানে ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। মাটিতে আছড়ে পড়ার পর দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে বিমানটি। বিস্তীর্ণ অংশ ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যানজট সৃষ্টি হয় রাস্তায়। গলগল করে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় কালো ধোঁয়া।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর অকুস্থলের যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে তাতে ধরা পড়েছে বিমানটি আছড়ে পড়ার পর তা একটি বহুতলের উপর আটকে গিয়েছে। বিমানের সামনের অংশটি আটকে গিয়েছে বহুতলে। বহুতলটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে দেওয়ালগুলি।

সূত্রের খবর, বিমানবন্দরের কাছে চিকিৎসকদের একটি হস্টেলের উপরে বিমানটি ভেঙে পড়ে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিমানটি মাটি ছাড়ার পর সামান্য কিছুটা এগিয়েছিল। তাই খুব বেশি উচ্চতায় উঠতে পারেনি।

উড়তে শুরু করার পর হঠাৎই বিমানটি বাঁ দিকে বাঁকতে শুরু করে। উপরে ওঠার পরিবর্তে তা নীচের দিকে নামতে শুরু করে। পরমুহূর্তেই তা ভেঙে পড়ে যায়। আগুনের গোলা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এর পরেই সেটির পিছনের দিকটি নীচের দিকে নেমে গিয়ে বিমানবন্দর চত্বরের ভিতরে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার’ নামক একটি বহুতলের উপর ভেঙে পড়ে।

অভিঘাতে বিমানটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিমানের চাকা ও বিভিন্ন অংশ। লোকালয়ে ভেঙে পড়ায় বহু প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। একযোগে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে অহমদাবাদের পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ডিজিসিএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানটিতে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩২ জন যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু সদস্য। বিমানের দুই পাইলটের নাম ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর।

বোয়িং সংস্থার ৭৮৭-৮ বিমানটিতে যাত্রী এবং বিমানকর্মী মিলিয়ে ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া ৫৩ জন ব্রিটিশ, এক জন কানাডিয়ান এবং সাত জন পর্তুগিজ নাগরিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বিজয় রূপাণী। তিনি লন্ডনে যাচ্ছিলেন। তাঁর কোনও খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

দুর্ঘটনার পর আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিমানটি ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেটি ভেঙে পড়ে। ফলে সেটি বেশি উচ্চতায় পৌঁছোতে পারেনি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘটনা প্রসঙ্গে অহমদাবাদের পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক বলেন, “একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটি কোন ধরনের বিমান, তা এখনও স্পষ্ট নয়।” ইতিমধ্যেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে ফোন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গুজরাত সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত আরও তথ্য জানার জন্য একটি নম্বর খুলেছে এয়ার ইন্ডিয়া। ১৮০০৫৬৯১৪৪৪ এই হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে বলে ঘোষণা করেছে উড়ান সংস্থা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে অহমদাবাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়েই কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডুর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গুজরাত সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রিন করিডর করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, ‘‘অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় আমি গভীর ভাবে শোকহত।’’

অহমদাবাদে জনবসতি অঞ্চলে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে বিপদবার্তা পাঠিয়েছিল (মে ডে কল)। ফ্লাইটরাডা২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেঙে পড়ার আগে বিমানটি মাটি থেকে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল। সেটি দ্রুত গতিতে নীচের দিকে নেমে আসতে শুরু করে।

পাইলটের কাছ থেকে বিপদবার্তা পেয়ে এটিসি যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বিমানের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। আপাতত দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমান পরিষেবা বন্ধ রয়েছে অহমদাবাদ বিমানবন্দরেও।

মেঘানি এলাকার যে বহুতলে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানে থাকেন সিভিল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। তার পাশের একটি বহুতলে থাকেন রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা। তাঁরা সকলেই অহমদাবাদের সিভিল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। কত জন হতাহত হয়েছেন, তা-ও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অসমর্থিত একটি সূত্র অনুসারে ১৫ জন চিকিৎসক আহত হয়েছেন।

ওই বাড়িটির কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানা যায়নি। স্থানীয়দের দাবি, ওই হস্টেলে প্রায় ৫০ জন ইন্টার্ন থাকতেন। দুর্ঘটনার সময় যাঁরা সেখানে ছিলেন, সকলেরই মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। প্রশাসনিক আধিকারিকদের দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গ্রিন করিডর করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩০টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সব ছবি: রয়টার্স, এএফপি, পিটিআই। আনন্দবাজার পত্রিকা।