এভিয়েশন ডেস্ক: ২০১৮ সালের মার্চে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পতিত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২১১–এর ঘটনায় নিহত ৫১ জনের পরিবারের পক্ষে দীর্ঘ সাত বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটেছে। কাঠমান্ডু জেলা আদালত প্রথমবারের মতো এ ধরনের মামলায় একটি বড় রায় দিয়ে বলেছে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৭৮ কোটি ৬০ লাখ নেপালি রুপি) ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ১৭টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে। এই পরিমাণ বিমা বাবদ প্রদেয় ২০ হাজার ডলার প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ধার্য ক্ষতিপূরণ ছাড়াই নির্ধারণ করা হয়েছে।
নেপালের ইতিহাসে ৭০ বছরের মধ্যে ৭০টি বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় ৯৬৪ জন প্রাণ হারালেও, এটাই প্রথমবার কোনও বিমান সংস্থাকে ‘গভীর অবহেলা’ ও ‘ইচ্ছাকৃত দায়িত্বহীনতা’র জন্য আদালতের মাধ্যমে দায়ী সাব্যস্ত করা হলো।
আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
বিচারক দিবাকর ভট্টের নেতৃত্বে এই রায় শুধু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত নয়, বরং এ সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে যাত্রী নিরাপত্তা এবং এয়ারলাইন্সের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে। আদালত ঘোষণা করেছে, ইচ্ছাকৃত অবহেলা বা গাফিলতির ক্ষেত্রে যাত্রীরা বা তাঁদের পরিবার সীমাহীন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।
রায়ের ভিত্তি হিসেবে আদালত ১৯২৯ সালের ওয়ারস কনভেনশন এবং ১৯৫৫ সালের হেগ প্রোটোকল ব্যবহার করেছে। নেপাল ও বাংলাদেশ ২০১৮ সালে দুর্ঘটনার সময় পর্যন্ত ১৯৯৯ সালের মন্ট্রিয়াল কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। ফলে আধুনিক ক্ষতিপূরণ কাঠামো এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি।
শিক্ষার্থী ও বিশেষ পেশাজীবীদের জন্য পৃথক ক্ষতিপূরণ
রায়ের আওতায় নিহত ১৩ জন এমবিবিএস শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২৩ দশমিক ৪ থেকে ২৪ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন নেপালি রুপি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। নিউরোসার্জন ডা. বল কৃষ্ণ থাপার পরিবার পাচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন রুপি। একজন নার্স ও একমাত্র জীবিত যাত্রী ডা. সামিরা ব্যাঞ্জনকার, যিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তাঁদের জন্যও আদালত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেছে।
বিমা ও ক্ষতিপূরণের বিভ্রান্তি
পরিবারগুলো প্রথম দিকে বিমান সংস্থার প্রস্তাবিত ৫০ হাজার ডলারের ক্ষতিপূরণ নিতে না চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। তাঁদের আইনজীবী অমৃত খারেল বলেন, বিমা আর ক্ষতিপূরণ এক নয়। বিমার টাকা টিকিটের মূল্যের মধ্যেই থাকে, যা যাত্রীই দেয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণ আসে সংস্থার দায় স্বীকার ও ক্ষতির প্রতিকারের অংশ হিসেবে।
বৈশ্বিক বার্তা
এই রায়ের মাধ্যমে নেপাল বিশ্বের কাছে একটি বার্তা দিল—এদেশেও আইনি প্রতিকার সম্ভব। একই সঙ্গে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বিমান সংস্থাগুলোর দায়িত্ববোধ, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও মনোযোগী হওয়ার বার্তা পাঠাবে।
এই রকম গুরুত্বপূর্ণ রায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও দায়িত্বশীলতা প্রশ্নে আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন businesstoday24.com-এ।