Home আন্তর্জাতিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ছয় ইউটিউবার গ্রেপ্তার

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ছয় ইউটিউবার গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হরিয়ানার বিভিন্ন জেলা থেকে ছয়জন ইউটিউবারকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন হিসার জেলার জ্যোতি মালহোত্রা নামের এক মহিলা ইউটিউবার, যিনি ‘ট্রাভেল উইথ জো’ নামে ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে ভ্রমণ বিষয়ক কনটেন্ট তৈরি করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

পুলিশের দাবি, এই ইউটিউবাররা দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হয়ে কাজ করছিলেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়েই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে এই চক্রটি। এরপর একাধিক পর্যবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত নজরদারি ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা হয়। পরে গত সপ্তাহে একযোগে অভিযান চালিয়ে হরিয়ানার হিসার, কৈথাল, পানিপথ, নুহ ও চিকা অঞ্চল থেকে মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া জ্যোতি মালহোত্রার সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে কয়েক লাখ সাবস্ক্রাইবার, আর ইনস্টাগ্রামেও রয়েছে এক লক্ষের বেশি ফলোয়ার। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ২০২৩ সাল থেকে অন্তত তিনবার পাকিস্তান ভ্রমণ করেছেন। এবছর মার্চ মাসে পাকিস্তান ভ্রমণের ভিডিও তিনি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।

তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে পাকিস্তানে গিয়ে জ্যোতি ইসলামাবাদের ভারত-বিরোধী সংস্থার সদস্য এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কর্মকর্তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে শুরু করেন।

পুলিশের ধারণা, এই তথ্যের বিনিময়ে জ্যোতি মোটা অঙ্কের অর্থ পেতেন। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও লেনদেন সম্পর্কেও তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি শুধু নিজে নয়, আরও কয়েকজন ইউটিউবারকে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত করেন। এই গোটা বিষয়টি ‘ভারতের বিরুদ্ধে একটি সাংগঠনিক, ডিজিটাল গুপ্তচর চক্র’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

হরিয়ানা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। যাচাই করে দেখা হচ্ছে, কী ধরণের তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে এবং কতদূর পর্যন্ত এই চক্র বিস্তৃত হয়েছে।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতা এবং বিদেশি দর্শকের প্রতি কনটেন্ট নির্মাতাদের আকর্ষণ অনেক সময় বিপজ্জনক পথেও এগিয়ে নিয়ে যায়। জনপ্রিয়তা ও আর্থিক প্রাপ্তির লোভে পড়ে কেউ কেউ শত্রু দেশের হাতিয়ার হয়ে ওঠছেন, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক মারাত্মক হুমকি।

প্রসঙ্গত, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ছিল একটি বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান, যেখানে দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তান-সমর্থিত সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা হচ্ছিল। এই অভিযানের সূত্রেই হরিয়ানার এই নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হয়।

হরিয়ানা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এখন এই চক্রের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, আর্থিক উৎস ও রাজনৈতিক অভিসন্ধি খতিয়ে দেখছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের গোপন তথ্য পাচার, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।